বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার ও উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সংকট এখন আঞ্চলিক সংকটে পরিণত হয়েছে।
রবিবার (১৯ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওভারসিজ করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত, ‘রোহিঙ্গা সংকট: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।
“ভবিষ্যতে এই সংকট আরো গভীর হতে পারে বলে উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ। বলেন, “দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পূর্ণ নাগরিক মর্যাদায় প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা জরুরি এবং এটাই একমাত্র স্থায়ী সমাধান।”
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ভারত ও চীনকে আরো নিবিড়ভাবে যুক্ত করা গেলে, দ্রুত এই সংকটের সমাধান সম্ভব বলে উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ।
“রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কূটনৈতিক পথ অবলম্বন করছি। একই সঙ্গে, আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে গেছি। গাম্বিয়া ও ওআইসির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছি;” জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মামলা বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে বলে জানান তিনি। আরো বলেন, “গাম্বিয়া বলেছে, মামলা সঠিক পথে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত এই মামলার ইতিবাচক আউটকাম আসবে।”
হাছান মাহমুদ বলেন, আইসিজের মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক চাপ মিয়ানমারের ওপর পড়বে বলে আশা করা যায়। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর যেসব দেশের প্রভাব আছে, তাদের এই বিষয়ে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
“কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তার সঙ্গেও রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু পরামর্শ তিনি আমাদের দিয়েছেন;” যোগ করেন হাছান মাহমুদ।
বছরের শুরুতে উগান্ডায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বলেন, ওই বৈঠকে মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়ানোর জন্য হলেও, মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়।
“কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাখাইন প্রদেশে এখন যে পরিস্থিতি, সেখানকার সেনাবাহিনী পালিয়ে আমাদের এখানে আসছে। এটিকে অন্তরায় মনে হলেও, গত ৬০-৭০ বছর ধরে মিয়ানমারের পরিস্থিতি কখনোই তেমন শান্ত ছিলো না। তাই এর মধ্যেই আমাদের চেষ্টা এগিয়ে নিতে হবে;” তিনি আরো বলেন।
হাছান মাহমুদ জোর দিয়ে বলেন যে রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন। তিনি জানান যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দিতে বলেছে। ক্যাম্পে তারা কিছু কাজ করছে।
“কিন্তু, তাদের পুরোপুরি জীবিকা নির্বাহের নিশ্চয়তা আমরা কীভাবে দেবো? রোহিঙ্গাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা এই সংকটের সমাধান নয়। একমাত্র সমাধান হচ্ছে সব অধিকারসহ তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন;” বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।