অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কিরগিজস্তান থেকে স্বদেশে ফিরতে চান আতঙ্কিত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা


বিশকেকে বিদ্বেষঃ সহিংস জনতার হামলার খবরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত।
বিশকেকে বিদ্বেষঃ সহিংস জনতার হামলার খবরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত।

কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে থেকে কয়েক সপ্তাহের জন্য দেশে ফিরে আসতে চান আতঙ্কিত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা, যদিও শহরের পরিস্থিতি এখন ‘নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে।

তার পরও, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কয়েক সপ্তাহের জন্য দেশে ফিরতে চায়। তারা আপাতত অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস করতে চায়।

কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে এর বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস জনতা হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

কিরগিজ সরকার জানায়, ১৭ ও ১৮ মে রাতে বিশকেকে এর বিভিন্ন স্থানে জনতার সহিংসতায় বেশ কয়েকজন বিদেশিসহ কমপক্ষে ২৮ জন আহত হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থী সামিয়া কবির ইউএনবি বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করছি, কিন্তু আমাদের ফ্লাইটের সমসূচি নেই।” সব বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এখন দেশে ফেরার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অনলাইনে ক্লাস করার কথা বলেছে বলেও জানান সামিয়া। আর, পরীক্ষার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিগগিরই একটি নোটিশ দেবে বলে জানান তিনি।

ঘরে থাকার পরামর্শ

অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরাও কিরগিজস্তান ছেড়ে যাচ্ছে বলে জানান সামিয়া কবির। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে, তারপরও আমরা এখানে নিজেদের নিরাপদ মনে করছি না। শিগগিরই চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হবে।”

কিরগিজস্তানে স্বীকৃত উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাস বলেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যানুসারে, কিরগিজস্তানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারপরও, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এই মুহূর্তে ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এ বিষয়ে যেকোনো সমস্যা হলে ২৪ ঘণ্টা খোলা জরুরি সেবা নম্বর +৯৯৮৯৩০০০৯৭৮০-তে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

শনিবার (১৮ মে) রাতে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাস কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এ বিষয়ে কিরগিজস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে দূতাবাস।

উজবেকিস্তানে অবস্থানরত একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক ইউএনবিকে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে থাকা তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশিরা অক্ষত রয়েছেন।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ফাইল ছবি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ফাইল ছবি।

হাছান মাহমুদের বক্তব্য

কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে এর বিভিন্ন স্থানে গত ১৭ মে রাতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার।

রবিবার (১৯ মে) বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কিরগিজস্তানকে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা হয়েছে। কিন্তু কেউ গুরুতর আহত হওয়ার সংবাদ আমাদের কাছে আসেনি।”

তিনি আরো জানান, উজবেকিস্তানে অবস্থিত দূতাবাসের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।দূতাবাস বর্তমানে কিরগিজস্তানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিরগিজ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখছে।

“এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুরুতর কোনো আহত বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি;” বলেন হাছান মাহমুদ। আরো বলেন, দূতাবাস ইতোমধ্যে তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি জরুরি যোগাযোগের নম্বর শেয়ার করেছে।

উজবেকিস্তানে দূতাবাসের মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিরগিজস্তানের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করছে।

এদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা নিবিড়ভাবে এবং অনবরত ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা তাসখন্দে অবস্থানরত আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে দ্রুত বিশকেকে যেতে বলেছি।”

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

এর আগে, কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে এর বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস জনতা হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়।

বিশকেকে থেকে পাকিস্তানের মিশন জানিয়েছিলো, শুক্রবার(১৭ মে) রাতে শুরু হওয়া সহিংসতার মধ্যে বিশকেকের কয়েকটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে হামলা হয়েছে। এ সব হোস্টেলে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা বসবাস করেন।

কিরগিজ সরকার জানিয়েছিলো, ১৭ ও ১৮ মে রাতে বিশকেকে এর বিভিন্ন স্থানে জনতার সহিংসতায় বেশ কয়েকজন বিদেশিসহ কমপক্ষে ২৮ জন আহত হয়। এর পর চারজন বিদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিশকেকের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস জনতা হামলা চালানো হয়েছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিশকেকের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস জনতা হামলা চালানো হয়েছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।

এই সহিংসতার বিষয়ে পাকিস্তান ও ভারত কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। দেশ দুটি বিশকেকে তাদের শিক্ষার্থীদের বাড়ির ভিতরে অবস্থান করার জন্য সতর্ক করে।

রেডিও ফ্রি ইউরোপ জানায়, ১৩ মে মিশরের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিরগিজ ছাত্রদের বিবাদের একটি ভিডিও অনলাইনে ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়ার পর এই সহিংসতা শুরু হয়।

যাদের মারধর করা হয়েছে, তারা কিরগিজ যুবক বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা দাবি করে। এর পর শুক্রবার (১৭ মে) রাতে বিশকেকে এর বেশ কয়েকটি স্থানে উত্তেজিত জনতা সমবেত হয়।

শনিবার (১৮ মে) বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তাদের নিরাপত্তার জন্য ইউএনবির কাছে সহায়তা চেয়েছিলেন।শনিবারই হামলার শিকার হন দেশটিতে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা।

কিরগিজস্তানের ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অফ মেডিসিনের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সামিয়া কবির শনিবার সন্ধ্যায় ইউএনবিকে বলেন, “আমরা এখানে পাঁচজন বাংলাদেশি মেয়ে আছি। আমরা এখন আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের ভিতরে আছি। আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে কিছু লোক জড়ো হচ্ছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন।”

XS
SM
MD
LG