অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিএনপির বিবৃতি: ‘ডোনাল্ড লুকে প্রশ্ন করার সময় কয়েকজন সাংবাদিক মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন’


বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর কালে, তার সঙ্গে কথা বলার সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বরাত দিয়ে, বাংলাদেশের দুটি গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা যে প্রশ্ন করেছেন, তার প্রতিবাদ করেছে বিএনপি।

শুক্রবার (১৭ মে) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, দেশের দুটি গণমাধ্যম, প্রথম আলো ও ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির সাংবাদিক ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিএনপির বরাত দিয়ে প্রশ্ন করার সময় সম্পূর্ণ অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন।

এতে আরো বলা হয়, বিএনপিকে হেয় করতেই প্রথম আলো ও ইনডিপেন্ডেন্ট টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা অবান্তর প্রশ্ন করেছেন। তারা তাদের প্রশ্নে বলেছেন, “বাংলাদেশের একটি বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করেছে, ভারতের মধ্যস্থতায় প্রভাবিত হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান নরম করেছে।”

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতা, কখনো কোথাও এ ধরনের মন্তব্য করেননি বা বক্তব্য দেননি। এ ধরনের মনগড়া বক্তব্য প্রকাশ করার মাধ্যমে বড় ধরনের ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করে।

প্রথম আলো ও ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির মতো বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের এ ধরনের অবাস্তব প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সুনামকে ক্ষুণ্ন করেছে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বিএনপি আরো বলেছে; বর্তমানে দেশের জনগণ ভয়াবহ দুঃশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট। বিএনপি নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে, জেল-জুলুম, নিপীড়ন ও নির্যাতন সহ্য করে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জনগণের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিএনপি বদ্ধপরিকর।

বিএনপির বরাত দিয়ে যে বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্ন করা হয়েছে তা সমীচীন নয় বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

উল্লেখ্য যে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বাংলা দৈনিক প্রথম আলো এবং ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন ডোনাল্ড লু’র সাক্ষাৎকার প্রকাশ ও সম্প্রচার করে। দুটো প্রতিষ্ঠানই তাদের ওয়েবসাইটে এই সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে।

প্রথম আলো

প্রথম আলো: বাংলাদেশের একটি বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করেছে, ভারতের মধ্যস্থতায় প্রভাবিত হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান নরম করেছে। বিএনপির নেতাদের এসব দাবির বিষয়ে আপনার মতামত কী?

ডোনাল্ড লু: অভিযোগটি হাস্যকর। আমরা বড় দেশ। সারা বিশ্বেই আমরা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। যুক্তরাষ্ট্র কী করবে, সে বিষয়ে কেউ আমাদের পরামর্শ দেয় না। ঠিক তেমনি বাংলাদেশকে কী করতে হবে, সেটিও আমরা বলি না। কাজেই অন্য দেশ যেভাবে বলেছে বা যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে আমরা কাজ করেছি বলে যে ধারণা, সেটা একেবারেই সত্যি নয়। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আমরা অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথাও আমরা বলেছিলাম। তাদের উদ্বুদ্ধ করতে গত বছর আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। নির্বাচনে সহিংসতা ও ভোটারদের ওপর বলপ্রয়োগ করায় আমরা পুলিশ, সরকারি ও বিরোধী দলের নেতাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি আরোপ করেছিলাম। আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে অর্থপূর্ণ সংলাপে বসতে বলেছিলাম। আমরা সভা-সমাবেশ ও বাক্স্বাধীনতার পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলাম। এটা খুবই স্বাভাবিক। এ অঞ্চলে আমরা এটা করি। বাংলাদেশে এসব মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে ঢাকার প্রতি পদক্ষেপকে ওয়াশিংটন দিল্লির চোখ দিয়ে দেখে। সম্প্রতি ভারতের এক কূটনীতিক বলেছেন, তাঁর দেশের প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের ওপর চাপ দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

ডোনাল্ড লু: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তার স্বার্থ যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখে। চীন, ভারত কিংবা রাশিয়ার স্বার্থের দৃষ্টিকোণ দিয়ে নয়। বাংলাদেশে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি আলোচনা হয়। আমি মনে করি, সেটি ফলপ্রসূ ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। তবে এটাও সত্যি যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত আলোচনা করছে। তারা সব সময় আলোচনা করে। এ অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা কথা বলি। সেই আলোচনায় শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ—কখনো কখনো বাংলাদেশ প্রসঙ্গও থাকে।

আমি বলব, যুক্তরাষ্ট্র মাঝেমধ্যে ভারতের নীতিতে প্রভাব বিস্তার করে। আবার কখনো কখনো ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে প্রভাব ফেলে। আর এটাকে আমরা কূটনীতি বলি। এটা আমরা এ অঞ্চলের সব দেশের ক্ষেত্রেই করি; যেটা স্বাভাবিক বটে। আমরা বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধ ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই দেখি।

XS
SM
MD
LG