কক্সবাজার জেলার উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (১৫ মে) ভোরে আস্তানাটি গুড়িয়ে দিয়ে সন্দেহভাজন দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আটকরা হলেন, সৈয়দুল আবেরার ছেলে মো. শাহনুর ওরফে মাস্টার সেলিম। র্যাবের দাবি সে আরসার চিফ কো-অর্ডিনেটর ও কমান্ডার। অপরজন মোহাম্মদ নুরের ছেলে মো. রিয়াজ।
র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন জানান, তাদের কাছ থেকে একটি রিভলবার, ৯টি গুলি, একটি এলজি গান, তিনটি কার্তুজ, পাঁচটি গ্রেনেড, তিনটি রাইফেল গ্রেনেড, হাতে তৈরি ১০টি গ্রেনেড ও রকেটের শেলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের উপস্থিতিতে জব্দকৃত গ্রেনেড, বোমা ও রকেট শেল ধ্বংস করা হয়।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে র্যাব-১৫ এর সদস্যরা উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন লাল পাহাড় ঘিরে ফেলে।
এলিট বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তারা পাল্টা গুলি চালালে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়।
২০২৩ সালে ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার করাসহ নানা কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে ৬৪ জন নিহত হয়। র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ক্যাম্পে এ পর্যন্ত ১৬ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।