ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একনিষ্ঠ ভক্ত বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। চলমান লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে মঙ্গলবার (১৪ মে) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
হিমাচল প্রদেশের মান্ডি লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কঙ্গনা রানাওয়াত । তার অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন কংগ্রেসের বিক্রমাদিত্য সিং।
মনোনয়ন জমা দেয়ার পর, প্রতিদ্বন্দ্বী দল প্রসঙ্গে কঙ্গনা বলেন, কংগ্রেসের মনোভাব খুবই উদ্বেগজনক। “মান্ডি লোকসভা আসনে আমি বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলাম। এটা আমার কাছে খুবই গর্বের দিন;” যোগ করেন কঙ্গনা রানাওয়াত।
তিনি আরো বলেন, “আমার দেশের মাটি থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি, এজন্য আমি গর্বিত। বলিউডে আমি সাফল্য পেয়েছি। আশা করি, রাজনীতিতেও সফল হবো।”
মান্ডির মানুষ ও তাদের ভালোবাসা তাকে নির্বাচনে নিয়ে এসেছে বলে উল্লেখ করেন কঙ্গনা। বলেন, এখন দেশের মেয়েরা সব ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে। মান্ডির মেয়েরা এখন সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছে। শিক্ষা, রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে চলেছে।
কঙ্গনা রানাওয়াতের অ্যাসিড আক্রান্ত বোন রঙ্গোলি রানাওয়াত বলেন, “ওর জন্য আমার শুভেচ্ছা রইলো। আজ যে নতুন যাত্রা শুরু হলো, তাতে মানুষের আশীর্বাদ পাবে কঙ্গনা।”
তার মা আশা রানাওয়াত মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় কঙ্গনার পাশে ছিলেন। আশা রানাওয়াত জানান, কঙ্গনাকে সমর্থন করতে এগিয়ে আসছে মান্ডির মানুষ। “আমরা নিশ্চিত কঙ্গনা জিতবে। আগেও সে মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছে, ভবিষ্যতেও করবে;” আরো বলেন আশা রানাওয়াত।
মান্ডি আসনে সব সময় কংগ্রেসের প্রার্থী জয়লাভ করে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা মান্ডির রাজা, বীরভদ্র সিং দীর্ঘকাল ধরে এই কেন্দ্রের প্রতিনিধি ছিলেন। বীরভদ্রের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী প্রতিভাদেবী সিং এই কেন্দ্রের প্রতিনিধি ছিলেন। এবার তার পুত্র বিক্রমাদিত্য সিং কংগ্রেস দলের প্রার্থী হয়েছেন।
কঙ্গনা রানাওয়াত এখানে নবাগতা। আর, তার পরিবারের কেউ কখনো রাজনীতি করেননি।
এ বছরের জুন মাসে বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত অভিনীত 'ইমার্জেন্সি' ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। ভারতে ১৯৭৫-৭৭-এ ২১ মাসব্যাপী যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল তার পটভূমিতে তৈরি এই ছবিতে কঙ্গনা কংগ্রেসনেত্রী, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
ভারতে বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা মোদী এবং দলের পক্ষে বিপুল সমর্থন এনে দিয়েছে।
গত ১০ বছরে, ক্ষমতায় থাকাকালীন মোদী যে এজেন্ডাগুলো পূরণ করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করা এবং একটি নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন, যা প্রতিবেশী দেশ থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মালম্বীদের নাগরিকত্ব দেয় কিন্তু মুসলমানদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়।
সমালোচকরা এবং বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করে আসছে, মোদীর দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি ক্ষুণ্ণ করেছেন। অধিকার গোষ্ঠীগুলির দাবী, তার এক দশকের দীর্ঘ শাসনামলে মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে এবং তারা হয়রানির শিকার হচ্ছে। বিজেপি দৃঢ়ভাবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে। তাদের দাবী, কল্যাণমূলক কর্মসূচি যেমন বিনামূল্যে রেশন, বাড়ি এবং টয়লেট তৈরিতে সহায়তা ইত্যাদি সব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সরকারের নীতির ফলে সকল ভারতীয় সমানভাবে উপকৃত হচ্ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের ভোটাররা ১৯ এপ্রিল একটি সাত ধাপের নির্বাচনে ভোট দেওয়া শুরু করে, যেখানে প্রায় একশ কোটি মানুষ ভোটার।
ভোটগ্রহণের সমাপ্তি হবে ১ জুন, এবং ভোট গণনা হবে ৪ জুন।