গাজা পরিস্থিতি, ইউক্রেন যুদ্ধ ও রোহিঙ্গা সংকট এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। এছাড়া দুই দেশ ঢাকা ও ডাবলিনে নিজেদের মিশন খুলতে সম্মত হয়েছে।
সোমবার (১৩ মে) ডাবলিনে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হয়। এসময় দুই দেশ এসব বিষয় নিয়ে আলাচনা করে।
দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বিবার্ষিক পরামর্শ বিষয়ক প্রথম সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয় এই কনসালটেশনে। বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে ৫২ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো চুক্তি সই হলো।
কনসালটেশনে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ট্যালেন্ট পার্টনারশিপের আওতায় আইরিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরো বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি এবং আইরিশ প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের আইটি পেশাজীবীদের নিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং আয়ারল্যান্ড প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল জোসেফ হ্যাকেট। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আয়ারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনীমসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা ও লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্ভাবনা সর্বাধিক কাজে লাগাতে, দুই দেশ যত দ্রুত সম্ভব নিজ নিজ রাজধানীতে দূতাবাস খোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে, বিশেষ করে অফশোর বায়ু শক্তি প্লান্টে বিনিয়োগসহ লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড, অভিযোজন এবং বিনিয়োগসহ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক ভাবে ভবিষ্যৎ জলবায়ু সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মোমেন স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আইরিশ জনগণ ও রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক ও মানবিক সমর্থন এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক ক্ষেত্র নিয়ে জো হ্যাকেটের সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশির বাণিজ্য, বিনিয়োগ, লাভজনক কর্মসংস্থান, অভিবাসন ও গতিশীলতা এবং কল্যাণে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর নতুন সুযোগগুলো অনুসন্ধান করেন উভয় দেশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠনকারী, আয়ারল্যান্ডের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শন ম্যাকব্রাইড-এর প্রতি শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।
আইরিশ এন্টারপ্রাইজ, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী সিমন কোভেনি টিডির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে জো হ্যাকেটে। তিনি বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য পেশাজীবী নিয়োগ ও জলবায়ু পরিবর্তন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যতমুখী ও ইতিবাচক সম্পৃক্ততার প্রতি আয়ারল্যান্ড সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
গত দেড় দশকে বাংলাদেশের অসাধারণ প্রবৃদ্ধি ও আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন জো হ্যাকেট। মিয়ানমার থেকে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়ে অসাধারণ মানবিক আচরণের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন কালে, বাংলাদেশ সফরের প্রত্যাশা করেন জোসেফ হ্যাকেট।