অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ঢাকায় পৌঁছেছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু


বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু মঙ্গলবার (১৪ মে) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পৌঁছেছেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন।

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে এবং একটি অবাধ, উন্মুক্ত ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রদর্শন করা তার সফরের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।

বেদান্ত প্যাটেল

স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপাল ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল জানান, ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের নেতা এবং আরো বাংলাদেশিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা গভীর করার বিষয়ে কথা বলবেন। এর মধ্যে, জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলায় দুই দেশ যাতে আরো সহযোগিতা করতে পারে, সেজন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকবে।

এই অঞ্চলে ত্রিদেশীয় সফরের (১০-১৫ মে) অংশ হিসেবে ডোনাল্ড লু ঢাকায় এসেছেন। এর আগে তিনি ভারত ও শ্রীলঙ্কা সফর করেন। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। এর পর এটাই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।

প্যাটেল বলেন, “তিনি প্রতিটি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে এবং একটি অবাধ, উন্মুক্ত ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রদর্শন করতে এই সফরে রয়েছেন।”

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান তার বাসভবনে ডোনাল্ড লু ও তার সফরসঙ্গীদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করবেন। ৩ দিনের সফরকালে লু পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চান, ১৭ মাসের মধ্যে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু তৃতীয় বার বাংলাদেশ সফর করছেন। এই সফরে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক না করার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে কিনা। যদিও আগের দুটি সফরে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।

সাংবাদিক আরো প্রশ্ন করেন যে যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে অবস্থান পরিবর্তন করেছে?’

জবাবে প্যাটেল বলেন, তাদের সরকারি কর্মকর্তারা কাদের সঙ্গে দেখা করেন বা না করেন, তার মধ্যে অনেকগুলো বিষয় নির্ভর করে; সময়সূচি, দিনের সময়, অন্যান্য অনেক বিষয়। অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ; বিশেষ করে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ সফর করছেন।

হাছান মাহমুদ

সোমবার (১৩ মে) বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, লু'র সফরে ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

একজন সাংবাদিক জানতে চান যে বাংলাদেশ এসব বিষয় উত্থাপন করবে কিনা; জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “এই বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসতে পারে।”

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক বজায় রয়েছে এবং এ সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে দুই পক্ষ একসঙ্গে কাজ করবে বলে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন থেকে যারাই বাংলাদেশ সফর করেন না কেন, সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা রয়েছে।”

মাসুদ বিন মোমেন

এদিকে, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, “আমাদের স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অন্যান্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সবাই আকৃষ্ট হয়েছে। তারা আরো বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।”

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বড় দেশগুলো অবশ্যই একে অপরের সঙ্গে তুলনা করছে। “আমি বলবো না যে এটি একটি প্রতিযোগিতা; তবে আমি বলবো যে তাদের সবারই অনেক আগ্রহ রয়েছে;” বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।

“নির্বাচন-পূর্ব প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। একটি স্থিতিশীল সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সব দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কথা চিন্তা করছে;” যোগ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন আরো বলেন, পারস্পরিক সম্পর্কের সব উপাদান; যেমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এমনকি নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে লুর সফরে আলোচনা হবে।

উল্লেখ্য, ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একদিন পর যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে বলেছে, “অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য এগিয়ে নিতে, বাংলাদেশে মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজকে সমর্থন এবং আমাদের জনগণের মধ্যে ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-তে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক এইলিন লুবাখার, ইউএসএআইডির এশিয়া ব্যুরোর সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন।

ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “দু'দিক থেকেই সদিচ্ছা আছে। আমরা একসঙ্গে আমাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় তৈরি করতে চাই।”

XS
SM
MD
LG