যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভিন্নমতালম্বী বাংলাদেশী সাংবাদিক কনক সারোয়ারের বোন নুসরাত শারিন রাকার দুই মামলার জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে যে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছিল তা এখনো বহাল আছে।
মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের সময় হাজির না হওয়ায় তার জামিন আদেশ বাতিল করা হয়।
বর্তমানে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে নুসরাত শারিন রাকা বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে তার আইনজীবীদের সূত্রে জানা গেছে।
কী ঘটেছিল?
২০২১ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র্যাব অভিযান পরিচালনা করে নুসরাত শাহরিনকে আটক করে।
আটকের পর রাষ্ট্রবিরোধী কনটেন্টসহ একটি মোবাইল ফোন, একটি পাসপোর্ট ও মাদক আইস রাখার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
এসব মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় রাকাকে।
নিম্ন আদালতে জামিন লাভে ব্যর্থ হয়ে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে পৃথক আবেদন করেন শারিন রাকা।
আদালতে জামিন আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, আইনজীবী জেড আই খান পান্না এবং এ এম জামিউল হক।
গ্রেফতারের পর প্রায় ৬ মাস কারাগারে থাকার পর ২০২২ সালের ৩০ মার্চ জামিনে মুক্তি পান নুসরাত শারিন রাকা।
২০২২ সালের (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) কোনও এক সময় তিনি দেশের বাইরে চলে যান।
এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি।
এ সময় রাকার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, তার ভাই কনক সারওয়ার বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে নিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকে কনটেন্ট প্রকাশ করায় রাকার বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো দেয়া হয়।
কী বলছেন রাকার আইনজীবীরা?
নুসরাত রাকার আইনজীবী জামিউল হক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আমি যতটুকু জানি নুসরাত রাকা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। তিনি বিদেশে থাকা অবস্থায় তার জামিন বাতিল হয়। এই কারণে হয়তো আর দেশে ফেরেন নাই।”
রাকার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালে ১৬ অক্টোবর নুসরাত শারিন রাকার বিরুদ্ধে হওয়া নিরাপত্তা আইনের মামলা জামিন বাতিল হয় এবং গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু হয়।
আর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের হওয়া মামলার জামিন বাতিল হয়।
বর্তমানে মামলা দুইটি নিম্ন আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
নুসরাত রাকার নামে হওয়া দুইটি মামলার বর্তমান আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান।
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “নুসরাত শারিনের দুইটি মামলার এখন সাক্ষ্য গ্রহণ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে মাদক মামলা বিচারাধীন রয়েছে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে-৩৭। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা রয়েছে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে।”
এই দুই মামলায় নুসরাত শারিনের জামিন বাতিল হয়েছে বলে জানান জিল্লুর রহমান।
জামিন কেন বাতিল হয়েছে জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, “মামলায় তিনিই একমাত্র আসামি। যখন মামলা সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আসে, তখন জামিন বাতিল হয়ে যায়। যদি মামলায় আরও আসামি থাকতো তখন হয়তো জামিন বহাল রাখা যেতো।”
রাকার জামিন কেন বাতিল হলো?
জিল্লুর রহমান বলেন, “ সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আসামি উপস্থিত না থাকলে জামিন বাতিল হয়ে যায়।"
২০২২ সালে তিনি বিদেশে যাওয়ার পর প্রথম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা জামিন বাতিল হয় বলেও জানান জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী ২৯ জুলাই এই মামলার পরবর্তী তারিখ রয়েছে।
এদিকে, মাদক মামলায় ২০২৪ সালের শুরুতে শারিন রাখার জামিন বাতিল হয় বলে উল্লেখ করে জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, “এই মামলায় আমরা জজকোর্টে (চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে) রিভিশন করেছিলাম। তখন কোর্ট রিভিশনকারী উপস্থিত না থাকাতে রিভিশন নামঞ্জুর করে জামিন বাতিল করে।”
কনক সারওয়ার কী বলেছিলেন?
২০২২ সালে বোনের গ্রেফতারের পর ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক কনক সারোয়ার বলেছিলেন, “তিনি বর্তমান সরকারের সমালোচনা করেন, রাষ্ট্রবিরোধী কোনও কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িত নন।”
তিনি আরও বলেছিলেন, “ভাইয়ের বিরুদ্ধে থাকা ক্ষোভের কারণে বোনকে এভাবে হেনস্থার মাধ্যমেই বরং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে।”
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামী হয়ে ২০১৫ সালে নয় মাস জেল খাটার পর ২০১৬ সালে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান কনক সারোয়ার।
তখন থেকে ফেসবুক ও ইউটিউবে সরকারের সমালোচনা করে আসছেন এই প্রবাসী সাংবাদিক।