ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায়, সোমবার (২২ এপ্রিল) চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
কলকাতা উচ্চ আদালত বলেছে, প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর যাদের চাকরি দেয়া হয়েছে, তাদের নিয়োগ ছিল অবৈধ। এই রায়ের মধ্য দিয়ে, ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করে দিলো আদালত।
কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আরো বলেছে যে অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরির মাধ্যমে যাদের চাকরি দেয়া হয়েছে, ৪ সপ্তাহের মধ্যে তাদের বেতনের টাকা ফেরত দিতে হবে।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক এবং অশিক্ষক শিক্ষা কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মোট ৩৫০টি মামলা হয়েছিলো পশ্চিমবঙ্গে। সব মামলা একত্রিত করে সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে।
বিচারপতি বলেছেন, দুর্নীতির বিষয়ে সিবিআই তাদের তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে। স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং শিক্ষা দফতরের যে সব অফিসার এই নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সিবিআই চাইলে তাদের হেফাজতে নিতে পারবে বলে উল্লেখ করেছে আদালত।
বিচারপতি দেবাংশু বসাক তার রায়ে বলেছেন, নিয়োগ বাতিল হওয়া ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের শূন্যপদে অবিলম্বে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। স্বচ্ছভাবে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে বলেছে আদালত।
এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “এ ব্যাপারে এখন কিছুই বলবো না।” তবে শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হতে পারে।
আগের কথা
এর আগে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে ৫ হাজার চাকরি বাতিল করেছিলো রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন। চাকরি হারানো শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা ভারতের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিম কোর্ট রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় এবং মামলা কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ফেরত পাঠায়। ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলো সুপ্রিম কোর্ট।
এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে, গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সব মামলা বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। প্রায় তিন মাস ধরে দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলে।
বাদী-বিবাদী পক্ষের বিশিষ্ট আইনজীবীরা চাকরিপ্রার্থী, রাজ্য সরকার এবং এসএসসির হয়ে যুক্ত-তর্কে অংশ নেন। শীর্ষ আদালতের নির্দেশিত সময়ের আগেই, গত ২০ মার্চ সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি শেষ হয়। তবে রায় প্রদান স্থগিত রাখে ডিভিশন বেঞ্চ। সোমবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করলো হাইকোর্ট।
এক জনের চাকরি টিকে গেলো
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায়ে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল হলেও, এক জনের চাকরি বহাল রইলো। তার নাম সোমা দাস। মানবিক কারণে সোমা দাসকে চাকরিতে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
ক্যানসারে আক্রান্ত সোমা। তাকে চাকরি দেয়ার বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানির সময় সোমার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
শিক্ষকতা করা ছাড়া সোমা অন্য কোনো সরকারি চাকরিতে আগ্রহী কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন তিনি। সোমা জানান, তিনি শিক্ষকতাই করতে চান।
গত ২০১৬ সালে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেছিলেন সোমা। সেই নিয়োগের মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও, তাকে চাকরি দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ আছে। তার পর থেকেই তিনি আন্দোলন শুরু করেন।
তার লড়াই আরো কঠিন হয় ২০১৯ সালের পর। সেই বছরই তার ক্যানসার ধরা পড়ে। চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে সহমর্মিতা জানাতে সোমা অবস্থান ধর্মঘটে যোগ দেন। সোমবার যখন আদালত ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করে, তখন সোমা তার চাকরিতে বহাল থাকেন।
কঠিন রোগের সঙ্গে লড়াই করার পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই চালিয়েছেন সোমা। তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন, ন্যায্য প্রার্থীরা নিয়োগ না পাওয়া পর্যন্ত গান্ধীমূর্তির তলায় বসে থাকবেন তিনি।