অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও শিক্ষার্থী আম্মান আটক


বাংলাদেশের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার
বাংলাদেশের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার

বাংলাদেশের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীকে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আম্মান সিদ্দিকী ও দ্বীন ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদের কুমিল্লা পুলিশে সোপর্দ করা হবে বলে জানান কমিশনার হাবিবুর রহমান।

কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন জানান, অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনমের অভিযোগের ভিত্তিতে রাতে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আম্মান সিদ্দিকী অবন্তিকাকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এবং অন্য মাধ্যমে যৌন হয়রানি করেন এবং জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম তাকে গালিগালাজ করেন।

এর আগে, ফেসবুকে একটি পোস্ট লিখে শিক্ষক ও সহপাঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা আত্মহত্যা করেন।

পোস্টে তিনি লিখেন, “আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী। আর, তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।”

তিনি আরো লিখেন, “আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের উপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করে আমার লাভ হয়নি। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার।”

বাংলাদেশের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী
বাংলাদেশের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা সদরের ঠাকুরপাড়া এলাকায় নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেল ৩টায় কুমিল্লা সরকারি কলেজে জানাজা শেষে, শহরতলীর শাসনগাছা মাহাজন বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

জানাজায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেফতাহুল হাসান, সহযোগী অধ্যাপক নুরুন নাহার মজুমদার, মুনিরা জাহান,কুমিল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ও সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ারুল হক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নূরুর রহমানসহ অবন্তিকার স্বজন, প্রতিবেশী ও সহপাঠীরা অংশ নেন।

এদিকে, এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে অবন্তিকার নিজ জেলা কুমিল্লায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এর আগে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা আত্মহত্যার পর বিচারের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং তা শনিবার সকাল পর্যন্ত চলে।

শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যা
শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যা

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার পর ক্যাম্পাসে আসেন উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। শুরুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভিসিকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেননি।

কিছুক্ষণ পর তারা তাকে ভেতরে ঢুকতে দেন। তখন তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।

অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শনিবার বিকাল ৩টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

পরে, অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আইন অনুষদের ডিন মাসুম বিল্লাহকে আহ্বায়ক ও আইন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দাসকে সদস্য সচিব করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন; সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন আবুল হোসেন ও সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ঝুমুর আহমেদ।

XS
SM
MD
LG