অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

'বয়কট ইন্ডিয়া' প্রচারণা ভারতের বাণিজ্য আর বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কে কতটুকু প্রভাব ফেলছে?


কলকাতার এক পাইকারি বাজারে মসলার বস্তা নামানো হচ্ছে। ফাইল ফটোঃ ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩।
কলকাতার এক পাইকারি বাজারে মসলার বস্তা নামানো হচ্ছে। ফাইল ফটোঃ ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩।

অমিতাভ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের একজন বড় রপ্তানিকারক। প্রধানত চাল-সহ অন্যান্য কৃষিপণ্য তিনি রপ্তানি করেন বাংলাদেশে। তিনি বললেন, গত মঙ্গলবারই (১৩ ফেব্রুয়ারি) চাল পাঠানোর উপরে স্বল্প সময়ের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত। বুধবার থেকে চাল যেতে শুরু করেছে।

এর মধ্যে তিনি এমন কোনো ইঙ্গিত পাননি যা থেকে মনে করা যেতে পারে যে বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য যাওয়া কমেছে বা তা নিতে কোনো কারণে অস্বীকার করছেন আমদানিকারকেরা।

“আমাদের যেটা প্রয়োজন সেটা হল লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি বা পণ্য রপ্তানির আগে টাকা পাওয়ার ব্যাংক গ্যারান্টি)। আমি সেটা পাই এবং ভূমি-সীমান্তের ওপারে চাল পাঠাই। আমদানিকারকেরা এমন কোনো ইঙ্গিত দেননি যাতে মনে হয় যে কোনো সমস্যা আছে,” বললেন ঘোষ।

প্রায় এই একই কথা বললেন মধ্য কলকাতার পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলের একটি শপিং মল ‘সিদ্ধা পয়েন্টে’র বিশালকায় কয়েকটি শাড়ির দোকানের কর্মীরা। দেবেশ রাই নামে এক কর্মচারী বললেন অনেক সময় বিক্রি কিছুটা কমে যায়।

‘’যেমন ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বিক্রি বেড়ে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে তা কমতে থাকে। কিন্তু এটা প্রতিবারই হয়,” তিনি বলেন।

রাই জানালেন, এরপরেই আবার ঈদের বাজার করতে মানুষ বাংলাদেশের ক্রেতারা আসবেন এবং বিক্রি বাড়বে। তাঁরা বয়কটের কথা শোনেননি বলেও জানালেন রাই।

শাহরুখ খানের 'পাঠান' এর পর ভারতীয় সিনেমার জন্য বাংলাদেশের বাজার উন্মুক্ত। ফটোঃ ২১ মে, ২০২৩।
শাহরুখ খানের 'পাঠান' এর পর ভারতীয় সিনেমার জন্য বাংলাদেশের বাজার উন্মুক্ত। ফটোঃ ২১ মে, ২০২৩।

'বয়কটের প্রভাব নেই'

মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স নামে একটি ব্যবসায়িক চেম্বারের মুখপাত্র এস রায়ও তাঁদের সংগঠনের এক্সপোর্টার-সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানালেন পণ্য বয়কটের কোনো প্রভাব তাঁরা অনুভব করছেন না।

একই কথা বললেন ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য যাওয়া-আসার সবচেয়ে বড় ভূমি বন্দর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে শুল্ক দফতরের কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী।

“এখনো এমন কোন প্রমাণ পাইনি যার ভিত্তিতে বলা যায় যে ভারত থেকে পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মাল বাংলাদেশে যাওয়া কমেছে,” বললেন চক্রবর্তী।

ভারত থেকে বাংলাদেশে যে পণ্য যায় তার ৫০ শতাংশের বেশি পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বলে জানিয়ে চক্রবর্তী বললেন যে, পঁচিশ-ত্রিশ হাজার কোটি টাকার পণ্য বছরে পেট্রাপোল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

“তবে কিছুদিন আগে মাল যাওয়া কমেছিলো। আমি শুনেছি, বাংলাদেশ সরকারই আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেছিল ডলার ঘাটতির কারণে। ব্যাংক ‘লেটার অফ ক্রেডিট’ দিতে অস্বীকার করছিল এবং এখানকার রপ্তানিকারকেরাও মাল পাঠাতে ভরসা পাচ্ছিলেন না,” বললেন চক্রবর্তী।

ঘনিষ্ঠ সম্পর্কঃ দিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ফটোঃ ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।
ঘনিষ্ঠ সম্পর্কঃ দিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ফটোঃ ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।

তবে তিনি এও বললেন যে বাংলাদেশে ভারতের পণ্য বয়কটের যে একটা প্রচারণা চলছে সে সম্পর্কে তিনি অবহিত। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের বলে মনে করেন কার্তিক চক্রবর্তী। ভারত-সহ আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমের একাংশ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক প্রচারের প্রভাব বাংলাদেশের রিটেল বাজারে পড়েছে।

বাংলাদেশের মানুষ 'ক্ষতিগ্রস্ত হবেন'

ভারতের রপ্তানির মোটামুটি ৩.৫ শতাংশ যায় বাংলাদেশে। পণ্য বয়কটের প্রচার চলতে থাকলে, সুদূর ভবিষ্যতে এই রপ্তানি সামান্য ধাক্কা খেলেও, বড় ধরনের সমস্যা ভারতের রপ্তানিকারকদের হবে না। কিন্তু বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে বাংলাদেশ, বললেন অরিন্দম মুখার্জী।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রকের সহযোগী হিসাবে কাজ করে কলকাতার একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ (আইএসসিএস), সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক অরিন্দম মুখার্জী।

মুখার্জির মনে হয় না বয়কটের ফলে ভারতের রপ্তানি মার খাবে। “যদি দু’এক শতাংশ ব্যবসা কমেও, ভারত সামলে নিতে পারবে। কিন্তু এটা চললে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বাংলাদেশের মানুষ,’’ তিনি বলেন।

‘’সস্তায় যে পণ্য তাঁরা পান, সেটা বন্ধ হলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। তৃতীয় কোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হলে, সেক্ষেত্রেও দাম বাড়বে কারণ ভারত থেকে বাংলাদেশে মাল নিয়ে যাওয়া সহজ ও সস্তা” মুখার্জি বলেন।

মোটামুটি ভাবে ভারত থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বাংলাদেশে যায়। আর সেই পণ্যের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই প্রচারণা রমজানের আগে শুরু করা হয়েছে বলে মনে করেন মুখার্জি।

“সুচতুরভাবে এই সময়টাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, যাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকার চাপে পড়ে। আওয়ামী লীগ এবং ভারত বিরোধী যে একটা ‘ইকো সিস্টেম’ তৈরি হয়েছে, সেটা ইউরোপে বসে এই প্রচারণা চালাচ্ছে,” বললেন মুখার্জি।

এর পিছনে বাংলাদেশের বিরোধী দল যেমন বিএনপি এবং জামাতে ইসলামীর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন মুখার্জি।

নরেন্দ্র মোদীঃ জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার। ফটোঃ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।
নরেন্দ্র মোদীঃ জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার। ফটোঃ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।

“একটা প্যাটার্ন আমরা দেখতে পাচ্ছি। জানুয়ারিতে নির্বাচনের আগে বিএনপি বা জামাত ভারতের বিরুদ্ধে বিশেষ কথা বলেনি। কিন্তু নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে, দেখা গেল বিএনপি ভারতের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করল।

‘’ভারত বিরোধী ইসলামিক দলও এতে মদত দিল। ভারত-বিরোধী ইস্যু যেমন সীমান্ত হত্যা থেকে বাণিজ্য ঘাটতি, সামনে এলো এবং আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যম বিষয়টি তুলে ধরল,” মুখার্জি বলেন।

তবে গত জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে জাপানের প্রচারমাধ্যম ‘নিক্কেই এশিয়া’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেন, দলীয় নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেননি।

বাংলাদেশের মানুষ সুদূর ভবিষ্যতে এই প্রচারের দ্বারা প্রভাবিত হবেন না বলে মন্তব্য করে অরিন্দম মুখার্জী বললেন, তবে ভারত সরকারের “সতর্ক থাকা প্রয়োজন কারণ প্রচারণা কখন কোন দিকে মোড় নেবে তা বলা মুশকিল।”

মালদ্বীপের উদাহরণ

ভারতে পণ্য বয়কটের প্রসঙ্গে মালদ্বীপের প্রসঙ্গ টানলেন ভারতের আরেক বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্ত। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশনের সাবেক সিনিয়র ফেলো এবং বর্তমানে জিন্দাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক দত্ত বলছিলেন মালদ্বীপের বিষয়টিকেও গোড়াতে হালকা ভাবে নিয়েছিল ভারত।

“মালদ্বীপের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, সেখানে যখন সমস্যার সূত্রপাত হয় তখন ভারতে যাঁরা অ্যাকাডেমিক স্তরে বিষয়টি নিয়ে চর্চা করেন, তাঁরা প্রসঙ্গটি সামনে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের বলা হয়, এটা চীন করছে এবং ভবিষ্যতে ভারত বিষয়টি সামলে নেবে। কার্যত সেটা হয়নি,” অধ্যাপক দত্ত বলেন।

মালদ্বীপ আগামী ১৫ই মার্চের মধ্যে সেখান থেকে ভারতের সেনাবাহিনী সরাতে বলেছে তাদের ‘ইন্ডিয়া আউট’ কর্মসূচির অংশ হিসাবে। একই ঘটনা কিছুটা বাংলাদেশেও সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘটছে বলে মনে করেন অধ্যাপক দত্ত।

“কিছুদিন আগে ভারত বলতে চেষ্টা করেছিল যে ভারত বিরোধী প্রচার লন্ডন থেকে করা হচ্ছে, বিএনপি করছে। এখন বাংলাদেশের ‘ডেইলি স্টার’ কাগজে একটি প্রতিবেদন বেরিয়েছে যা বিস্তারিতভাবে জানিয়েছে এটাকে (বিএনপি'র আন্দোলন) ভাবাটা ভুল। এটা কিছু ব্লগার ইউরোপে বসে করেছে,” তিনি বলেন।

FILE PHOTO: Chinese President Xi Jinping and Maldivian President Mohamed Muizzu attend a welcome ceremony at the Great Hall of the People in Beijing, Jan. 10, 2024. (cnsphoto via Reuters)
বেইজিং-এ চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সাথে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহাম্মাদ মুইযযু। ফটোঃ ১০ জানুয়ারি, ২০২৪।

শেখ হাসিনার গুরুত্ব

অধ্যাপক দত্ত মনে করেন, একটা জটিল বিপরীতমুখী পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে যার সামান্যই এই প্রচারণার মাধ্যমে সামনে এসেছে।

“আমরা সবসময়ই জানতাম যে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখন দেখা যাচ্ছে যে একজন নেত্রী রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকছেন। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে যেটা অগ্রাধিকার পাচ্ছে সেটা হল আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা এবং নিরাপত্তা।"

‘’আমরা মনে করছি, শেখ হাসিনাই এটা দিতে পারবেন, কিন্তু যখন আমরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছি তখন একটা বড় অংশ – যার মধ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থকও রয়েছেন – তাঁরা বলছেন নির্বাচনে তাঁরা হতাশ। এখন দু’পক্ষই বলছে যে তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত। ঠিক কথা। কিন্তু মানুষ কী ভাবছেন সেটা বোধহয় ভাবা হচ্ছে না।

‘’ভারতের তরফে মানুষের প্রতিক্রিয়া মাপা হচ্ছে এই বলে যে ভারত যথেষ্ট পরিমাণে ভিসা দিচ্ছে। কিন্তু এটা মাথায় রাখা প্রয়োজন যে বাংলাদেশের মানুষেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে পূর্ব বা দক্ষিণ ভারত এবং দিল্লির আর্থিক বৃদ্ধির পিছনে। কারণ সেখানকার মানুষ এখানে নিয়মিত আসছেন,” তিনি বলেন।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফটোঃ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফটোঃ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।

তবে একই সঙ্গে অন্য একটা দৃষ্টিকোণও রয়েছে বলে জানালেন অধ্যাপক দত্ত।

“এই নির্বাচন চীন, ভুটান মেনে নিয়েছে। ভারত যদি না মানতো তাহলে কি হতো? ভারতের ‘পয়েন্ট অফ ভিউ’ থেকে বলতে হয়, ভারত যা করেছে তা নিজের প্রয়োজনে করেছে,” তিনি বলেন।

“আপনি যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে আপনাকে (অর্থাৎ বাংলাদেশকে) তার ঘর নিজের মতো করে গুছোতে হবে। তাঁরা যদি সেটা না করেন এবং বলেন ভারত কেন সমর্থন দিল, তবে তা ভিত্তিহীন, কারণ যে কোন দেশই নিজের স্বার্থ দেখবে,” বক্তব্য শ্রীরাধা দত্তের।

'বিএনপির দোষ, ভারতের না'

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সর্বজিত চক্রবর্তী একসময় ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার হিসাবে ঢাকায় কাজ করেছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ নির্বাচনে ভারতের 'নাক গলানোর' অভিযোগ ভিত্তিহীন।

“প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে, ভারত নয়। কিন্তু দোষ দিচ্ছেন ভারতের। আমাদের কোনো প্রভাব বিএনপির উপরে নেই এবং এই নির্বাচনে ভারত কোনো ভাবে নাক গলায়নি,” তিনি বলেন।

“বাংলাদেশের মানুষ কাকে রাখবেন এবং কাকে রাখবেন না সেটা তাদের ব্যাপার, আমাদের কিছু বলার নেই এবং প্রভাবিত করারও কিছু নেই। এখন বিএনপি যদি নিজের পায়ে প্রতিবার গুলি করে, তার জন্য কি ভারত দায়ী?” প্রশ্ন অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত চক্রবর্তীর।

তিনি বলেন, এই অবস্থায় ভারতের পণ্য বর্জনের যে কর্মসূচি কিছু ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে “তাও অতএব ভিত্তিহীন।“

“কেন এই প্রোগ্রাম সফল হবে না, তারও নানান কারণ বলা যায়। বাংলাদেশ যে পণ্য আমদানি করে, তার ৯০ শতাংশ যায় ভারত থেকে। ভারতের পণ্যের গুণগতমান ভালো যে কারণে দীর্ঘদিন এই বয়কট চলবে না।”

চক্রবর্তী মনে করেন, ব্যবসায়িক পরিস্থিতি বরং দ্রুতই পাল্টাবে এবং তা থেকে লাভবান হবে বাংলাদেশ। এর প্রধান কারণ সিইপিএ (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট)।

“বাংলাদেশের সঙ্গে কি বাণিজ্য ঘাটতি সেটা সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার এই মেয়াদেই অনেকটা মেটানো সম্ভব হবে। সিইপিএ নিয়ে কথাবার্তা এগিয়েছে এবং এই চুক্তি যদি সই হয় তাহলে (ভারতে) বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়বে প্রায় ৩০০ শতাংশ অর্থাৎ ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে তা চলে যাবে ৯ বিলিয়ান ডলারে। ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজার বাংলাদেশ অনেকটাই ধরতে পেরেছে।”

'গ্রেটার ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্ট’

প্রস্তাবিত সিইপিএ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নিয়মমাফিক মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তির বাইরে গিয়ে পরিষেবা, বিনিয়োগ, বুদ্ধিবৃত্তিক-সম্পত্তি অধিকার এবং ই-কমার্স সম্বন্ধীয় অনুমতি বাংলাদেশের সংস্থাকে দেবে। অর্থাৎ, পরিষেবার অনেক ক্ষেত্রে ভারতে ব্যবসা করতে পারবে বাংলাদেশ এবং সম্ভবত আয় বাড়াতে পারবে। তবে ভারত বিরোধী প্রচার পুরোপুরি বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে বলে মনে করেন না অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত চক্রবর্তী।

“এই ধরনের বয়কটের তো আমরা গত ৫০ বছর ধরে দেখছি – সেই জিয়াউর রহমানের আমল থেকে, পরে এরশাদ থেকে তার পরবর্তী সময়েও দেখেছি। কিন্তু এর ফলে কি গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে না উন্নতি?

‘’সামগ্রিক ভাবে যদি বিচার করা যায়, তাহলে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতেই পারি যে একেবারে নিচের দিকে কিছুটা ভারত বিরোধী আবেগ সবসময়ই থাকবে যা কখনো-সখনো এই ধরনের প্রচারের মাধ্যমে সামনে আসবে, কিন্তু সার্বিক সম্পর্কের বিরাট পরিবর্তন হবে না। এর কারণ, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আরও দৃঢ় মেলবন্ধনের একটা প্রক্রিয়া চলছে –একটা ‘গ্রেটার ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্ট’।

‘’আমরা দেখছি, অতীতে যোগাযোগের জন্য যে সড়ক, রেল বা জলপথ ছিল তা সংস্কার করা হচ্ছে। এতে দু’দেশের ব্যবসা বাড়বে। ইতিহাস বলে, যে সম্পর্ক দৃঢ় করার এই প্রচেষ্টা হঠাৎ করে আবার পিছনের দিকে চলে যায় না। ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কও ভবিষ্যতে পিছনে হাঁটবে না,” বললেন সর্বজিত চক্রবর্তী।

অর্থাৎ, ভারতের পন্য বয়কটের প্রচারণা স্বল্প সময়ের জন্য একটা আলোড়ন সৃষ্টি করলেও, অদূর ভবিষ্যতে দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের উপরে বিশেষ ছাপ ফেলতে পারবে না, এটাই সামগ্রিক বক্তব্য ভারতের পর্যবেক্ষকদের।

XS
SM
MD
LG