অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নরেন্দ্র মোদী: 'সংসদে নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপোস নয়'


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ভারতের সংসদে ক্যানিস্টার নিয়ে সংসদ সদস্যদের বেঞ্চের দিকে ঝাঁপ দেন দুই তরুণ, স্প্রে করেন রাসায়নিক রং। বাইরেও ক্যানিস্টার নিয়ে প্রতিবাদ করার জন্য ঘুরছিলেন আরও চার জন। এই ঘটনার পর সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ক্যানিস্টার থেকে রঙ ছোড়ার ঘটনা নিয়ে নিজের বাসভবনে বৃহস্পতিবার ১৪ ডিসেম্বর কয়েক জন মন্ত্রীকে নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনাকে হাল্কাভাবে নেওয়া যাবে না। গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

কেন্দ্রের উচ্চ পদস্থ মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, "এই বিষয় নিয়ে রাজনীতি করার সময় নয়। নিরাপত্তা সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং কোনওরকম আপোস করা যাবে না।"

সংসদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে এই বৈঠকে।

বৈঠকে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সহ আরও কয়েকজন। সেই

বুধবারের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সরকারের বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা ঘটনার তদন্ত শুরু করছে।

ধৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, সংসদে সন্ত্রাসমূলক হামলার কোনও ছক ছিল না তাদের। তারা বেকারত্ব, কৃষকদের সমস্যা, মণিপুরের চলতে থাকা সহিংসতার মতো বিভিন্ন বিষয়গুলি সংসদ সদস্যদের নজরে আনার জন্যই এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।

ধৃতদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন বা ইউএপিএ-তে মামলা করা হলেও এখনও পর্যন্ত দেশ বিরোধী কোনও সংগঠন বা সংস্থার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ পাওয়া যায়নি।

বিক্ষোভ দেখিয়ে বহিষ্কৃত ১৫ সংসদ সদস্য

বুধবার সংসদের অধিবেশন কক্ষে হামলার ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার ১৩ ডিসেম্বর সংসদের দুই কক্ষ রাজ্যসভা ও লোকসভার অধিবেশন উতপ্ত হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার সংসদে ভিজিটর বা দর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।

বৃহস্পতিবার অধিবেশনের শুরুতেই বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা অভিযোগ তোলেন, বুধবার সংসদের ভেতরে রং বোমার ঘটনা সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেন।

সংসদে হামলার ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুই কক্ষই সকাল থেকে উত্তাল ছিল। দফায় দফায় মুলতুবি হয় অধিবেশন।

বিরোধীরা বুধবারের ঘটনা নিয়ে সরকারের বিবৃতি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন।

বিক্ষোভ দেখানো ও সংসদের কর্মসূচীতে বাধা দানের কারণে দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট ১৫ জন সংসদ সদস্যকে চলতি অধিবেশনের বাকি দিনগুলির জন্য বৃহস্পতিবার বহিষ্কার করা হয়েছে।

ভারতের সংসদে হামলার ঘটনা নিয়ে দুই কক্ষই উত্তাল ছিল।
ভারতের সংসদে হামলার ঘটনা নিয়ে দুই কক্ষই উত্তাল ছিল।

বহিষ্কৃত সদস্যদের মধ্যে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম-সহ একাধিক দলের সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস-এর ডেরেক ও' ব্রায়েন রাজ্যসভার সদস্য।

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে সংসদ ভবনের অফিসেই ছিলেন। তবে অধিবেশন কক্ষে যাননি। রাজ্যসভায় বিরোধী সংসদ সদস্যরা রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে স্লোগান দিতে থাকেন।

রাজ্যসভায় চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড় তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ও' ব্রায়েনকে সভাত্যাগ করতে বলেন। পরে তিনি ভারতীয় সময় দুপুর ১২’টা পর্যন্ত সভা মুলতুবি করে দেন।

এদিন লোকসভাও ছিল সমান উত্তপ্ত। লোকসভার অধিবেশন বসা মাত্র এই ইস্যুতে বিরোধী ও শাসক দলের তর্ক শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে এদিন অধিবেশন বেলা ভারতীয় সময় দুপুর ২’টো পর্যন্ত স্থগিত করে দেন স্পিকার ওম বিড়লা। দু’বার সভা মুলতুবি ঘোষণা করেন স্পিকার ওম বিড়লা।

ভারতীয় সময় দুপুর ২’টোয় লোকসভার স্থগিত অধিবেশন ফের বসলে সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী সকালের গোলমালের জন্য বিরোধী দলের পাঁচ সংসদ সদস্যকে বহিষ্কারের প্রস্তাব পেশ করেন।

স্পিকার ভোটাভুটির অনুমতি দিলে তাদের চলতি অধিবেশনের বাকি দিন অর্থাৎ ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়।

এই পাঁচ সদস্য হলেন টিএন প্রাথাপন, হিবি ইডেন, যোথিমানি, রাম্য হরিদাস এবং ডিন কুরিয়াকোস। তাদের বহিষ্কার করার পর সভা ভারতীয় সময় বিকেল ৩’টে পর্যন্ত মুলতুবি করে দেওয়া হয়।

তৃতীয় দফায় অধিবেশন বসলে সংসদীয় মন্ত্রী আরও নয় জন সংসদ সদস্যের নাম বহিষ্কারের জন্য প্রস্তাব করেন। তারা হলেন, কংগ্রেস-এর ভিকে শ্রীকানদন, বেন্নি বেহানন, মহম্মদ জাহেদ, মনিক্কাম টেগোর, সিপিএম-এর পিআর নটরাজন, এস ভেঙ্কটেশন, ডিএমকে-র কাজিমোঝি এবং এস পার্থিবন ও সিপিআই-এর কে সুব্বারায়ন।

প্রার্থিবনকে বহিষ্কারের কথা জানানো হলেও তিনি বৃহস্পতিবার সংসদে ছিলেন না। তিনি ছিলেন চেন্নাইয়ে।

আট নিরাপত্তা রক্ষীকে সাসপেন্ড

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের নতুন সংসদ ভবনে অধিবেশন শুরু হয়েছিল। উদ্বোধনের ২০০ দিন পেরনোর আগেই বুধবার ১৩ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে 'স্মোক বম্ব' নিক্ষেপের ঘটনায় নতুন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নয়া দিল্লিতে ভারতের নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের আগে পুলিশ অফিসাররা। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩।
নয়া দিল্লিতে ভারতের নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের আগে পুলিশ অফিসাররা। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩।

বুধবার সংসদে 'স্মোক বম্ব' হামলার পরেই নিরাপত্তাবিধিতে বড়সড় বদল আনা হল। এই ঘটনায় সাসপেন্ড করা হয়েছে ৮ জন নিরাপত্তারক্ষীকে।

বুধবার ১৩ ডিসেম্বর ছিল ভারতের সংসদ ভবনে হামলার ২২ বছর পূর্তি। ২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়ে ১৩ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। সেই ঘটনায় ন’জন নিহত হয়েছিলেন।

সন্ত্রাসের সেইদিনটিকে স্মরণ করেই বুধবার সকালে সংসদের দুই কক্ষ - লোকসভা ও রাজ্যসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছিল। এর কিছুক্ষণ পরেই হামলা হয়।

বিজেপির এক সংসদ সদস্যের দেওয়া প্রবেশপত্র নিয়ে 'স্মোক বম্ব' লুকিয়ে নিয়ে সংসদ ভবনে দর্শক হিসাবে প্রবেশ করেছিলেন অভিযুক্ত দুই যুবক।

অধিবেশন চলাকালীন ভারতীয় সময় দুপুর ১টা নাগাদ দর্শক আসন থেকে সংসদ সদস্যদের ফ্লোরে ঝাঁপ মেরে সেই স্মোক ক্র্যাকার ছুড়তে থাকেন তারা।

হলুদ ধোঁয়ায় ভরে যায় সংসদ কক্ষ। ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই দুই যুবককে ধরেন লোকসভারই দুই সংসদ সদস্য, উত্তর প্রদেশের মালুন নাগর (বহুজন সমাজ পার্টি) এবং রাজস্থানের হনুমান বেনীওয়াল (রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি)। শুরু হয় হাতাহাতি।

কক্ষের ভেতরে যখন চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সেই সময়েই সংসদ ভবনের বাইরে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান তোলেন দুই বিক্ষোভকারী।

এই ঘটনা ঘটার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সংসদ ভবনের নিরাপত্তা প্রোটকলে বড়সড় বদল আনা হল। এবার থেকে ভবনের ভেতরে ও বাইরে চলবে কড়া নজরদারি।

যেসব বদল আনা হল নিরাপত্তায়

সংসদ ভবনে কোনও ভিজিটর বা দর্শকদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। আপাতত বাইরের লোকের ঢোকায় পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সংসদে সকলের প্রবেশের জন্য আলাদা আলাদা গেট করা হচ্ছে। সংসদ সদস্যরা ঢুকবেন একটি গেট গিয়ে, সংসদের কর্মীরা অন্য গেট দিয়ে, আর সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ঢুকতে হবে অন্য রাস্তা দিয়ে।

পরে যখন ভিজিটর বা দর্শকদের ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে তখন তারা ঢুকতে পারবেন চতুর্থ গেট দিয়ে।

সংসদ ভবনের প্রবেশপথে বসবে বডি স্ক্যানার মেশিন, যেমন বিমানবন্দরে থাকে।

ভিজিটর বা দর্শকদের গ্যালারির সামনের অংশ কাচ দিয়ে ঢাকা থাকবে যাতে কেউ ঝাঁপ দিয়ে বা লাফিয়ে নেমে আসতে না পারে।

XS
SM
MD
LG