ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে। বাতাসের গুণমান কোথাও ৫০০, কোথাও ৯০০, আবার কোথাও ৯০০ ছাড়িয়ে গেছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এই দূষণ চলতি বছরে অত্যন্ত বেড়ে গেছে।
তা সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে দীপাবলির রাতে অর্থাৎ রবিবার ১২ নভেম্বর প্রচুর বাজি ফাটিয়েছেন দিল্লিবাসী। দিল্লির বাতাসে বিষাক্ত ধোঁয়াশা আগে থেকেই ছিল, তার উপর বাজির ধোঁয়া মিশে গিয়ে দূষণ ‘অতি ভয়ঙ্কর’ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ধোঁয়াশায় সম্পূর্ণ ঢেকে গেছে রাজধানীর বাতাস। দৃশ্যমানতাও অনেক কমে এসেছে। দিল্লিতে যে কোনও রকম বাজি পোড়ানোতেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল দেশের শীর্ষ আদালত। যানবাহন চলাচলেও জোড়-বিজোড় নীতি চালু হয়েছিল। আগামী ২০-২১ নভেম্বর দৃষণ নিয়ন্ত্রণ করতে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রস্তুতিও চলছে। তার মধ্যেই দিল্লিবাসীর বেপরোয়া মনোভাব আরও বড় বিপদ ডেকে আনল বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদরা। গোলে মার্কে, রামনগর মার্কে, পাহারগঞ্জ, মন্দির মার্গ প্রভৃতি এলাকায় পোড়া বাজি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে রাস্তায়। আতস বাজির সঙ্গে শব্দবাজিও পোড়ানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (সিপিসিবি) জানিয়েছে, রবিবার ১২ নভেম্বর সকালে দিল্লিতে বাতাসের গুণমান (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই) কিছুটা ভালর দিকে ছিল। একিউআই পরিমাপ করা হয় ২১৮। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই প্রচুর পরিমাণে বাজি পোড়ানো শুরু হয়ে যায়। বাজির ধোঁয়ায় ফের বিষ-বাষ্পে ঢাকতে শুরু করে দিল্লির আকাশ। রাতে দেখা যায় দিল্লির বাতাসের গুণমান ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামের আশপাশে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৯১০ যা অতি বিপজ্জনক। লাজপত নগরে রাতে একিউআই ওঠে ৯৫৯, কারোল বাগ এলাকায় ৭৭৯।
দিল্লির স্বাস্থ্য বিভাগ জনসাধরণের জন্য একটি সতর্কবার্তা জারি করেছে। যেখানে বলে হয়েছে পরিস্থিতি বিচার করে বর্তমান সময়ে প্রাতঃভ্রমণ ও ব্যায়াম এড়িয়ে চলতে হবে। গর্ভবতী মহিলা, প্রবীণ নাগরিক এবং শিশু, যারা কোনও না কোনওভাবে চিকিৎসাধীন, তাদের রাস্তায় বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। আবহাওয়ার পরিস্থিতি দেখে আগামী ২০-২১ নভেম্বর দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানো হবে দিল্লিতে।
চিকিৎসকরা বলছেন, বাড়তে থাকা দূষণ স্কিৎজোফ্রেনিয়া, অবসাদ বা ডিপ্রেশন, স্মৃতিনাশ বা ডিমেনশিয়া-র কারণ হয়ে উঠছে। কারণ বাতাসে ভাসমান বিষাক্ত কণা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। অনেক ক্ষেত্রে শিশুর মানসিক বৃদ্ধিও থমকে যাচ্ছে দূষণের কারণেই।বিশেষ করে সদ্যোজাতরা যদি দূষিত আবহাওয়ায় বেশি সময়ে কাটায়, তাদের উপর প্রভাব পড়ছে বেশি।