অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

তদন্তের নামে সাংবাদিকদের ডিজিটাল সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না কেন্দ্রীয় এজেন্সি, জানাল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট


ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভবন
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভবন

ভারতে সাংবাদিকদের ডিজিটাল সামগ্রী (মোবাইল, ল্যাপটপ) বাজেয়াপ্ত করা নিয়ে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সঞ্জয় কিসান কল এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চে সম্প্রতি একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। সেই মামলার শুনানিতে উঠে আসে, কেন্দ্র অনেক সময়েই এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে সংবাদ মাধ্যমেরও কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে।

এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্রকে তীব্র ভর্ৎসনা করে আদালতের পর্যবেক্ষণ, “এজেন্সিগুলো সর্বশক্তিমান হয়ে উঠলে তা খুবই বিপজ্জনক বিষয়। এজেন্সি দিয়ে দেশ চালানো হবে, এমনটা হতে পারে না।”

দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দীর্ঘদিনের অভিযোগ, বিজেপির বিরোধী প্রতিটি রাজ্যেই নির্বাচন এলে বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির সক্রিয়তা বাড়ে।

বিজেপির বিরুদ্ধে সারা দেশে বিরোধীদের আনা এই অভিযোগকেই এবার কার্যত স্বীকৃতি দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আগামী ২০২৪-এ কেন্দ্রে বিজেপিকে আটকাতে সর্বভারতীয়স্তরে ২৯টি বিজেপি বিরোধী দলের 'ইন্ডিয়া' জোট গড়তেই রাজ্যে রাজ্যে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে সক্রিয় করার অভিযোগ তুলেছে বিরোধী দলগুলি বিজেপি শিবিরের বিরুদ্ধে। রাজধানী দিল্লিতেও আবগারী কাণ্ডে কেজরিওয়াল সরকারের উপর কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত চলছে।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে এসেছে যে, দেশে অনেকগুলি তদন্তেই সাংবাদিকদের মোবাইল, ল্যাপটপ পুলিশ-সহ তদন্তকারী অফিসারেরা বাজেয়াপ্ত করে এবং দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছে, তদন্তের নামে এজেন্সিগুলি চাইলেই মোবাইল, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না। শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কৌল এবং সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ কেন্দ্রকে বলেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে করা যাবে, সে ব্যাপারে কেন্দ্রকে এক মাসের মধ্যে একটি বিধি তৈরি করতে হবে। দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই কাজ না করলে শীর্ষ আদালতই তা তৈরি করে দেবে। তদন্তের নামে এই সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস সব সময় বাজেয়াপ্ত করা যাবে না।

ফাউন্ডেশন অফ মিডিয়া প্রফেশনাল-এর জনস্বার্থ মামলায় আদালত বলে, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না যে তদন্তের জন্য সর্বদা সাংবাদিকের মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করা দরকার।

সংশ্লিষ্ট মামলায় এই প্রসঙ্গে দুই বিচারপতি বলেন, খবরের সোর্স বা সূত্র অনেক সময় সাংবাদিকদের গোপন রাখতে হয়। মোবাইল, ল্যাপটপে অনেক ব্যক্তির নাম, ফোন নম্বর থাকে যা সাংবাদিক গোপন রাখতে চান। পুলিশ, ইডি, সিবিআই তদন্তের নামে প্রথমে এগুলিই বাজেয়াপ্ত করে নেয়।

সম্প্রতি ভারতে দুটি ঘটনায় তদন্তের নামে সাংবাদিকদের অধিকার হরণের অভিযোগ ওঠে। বিবিসি-র বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির তদন্তেও দেখা যায় সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস সাময়িকভাবে নিয়ে নেওয়া হয়। গত অক্টোবর মাসে নিউজক্লিক সংস্থার বিরুদ্ধে দেশ বিরোধী চক্রান্তে যুক্ত থাকার অভিযোগের তদন্তেও বহু সাংবাদিকের মোবাইল, ল্যাপটপ খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। এছাড়া একাধিক মামলায় বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশ-সহ রাজ্যের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলিও একই পথ অনুসরণ করে থাকে। এর ফলে সাংবাদিকদের গোপন সোর্সদের নাম-পরিচয় জেনে যান তদন্তকারীরা। ভবিষ্যতে সেই ব্যক্তি বিপদে পড়তে পারেন, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

XS
SM
MD
LG