গত কয়েক বছর ধরেই ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণের মাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থেকে শহরবাসী, পরিবেশবিদ, সকলেরই দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ও শারীরিকভাবে অসুস্থ মানুষের সংখ্যাও একই কারণে বাড়ছে সে রাজ্যে। বিশেষত শীতের শুরু থেকে গোটা মরশুম জুড়েই এই দূষণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। এই চিন্তা আরও বাড়য়ে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তকমা পেয়েছে দিল্লি। রাজধানীর বাতাসের গুণমান অতি খারাপ বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। বাতাসের মান বিপদসীমা পার করে ফেলেছে।
রাজধানীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আগেও মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। দূষণ রোধে সবরকম আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পাকাপাকি কমিটি তৈরির নির্দেশও দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এবার সুপ্রিম কোর্ট জানাল, দিল্লির দূষণের মূল কারণ প্রতিবেশী রাজ্য পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় ফসলের গোড়া পোড়ানো। তাই অবিলম্বে পড়শি রাজ্যগুলোকে ফসলের গোড়া পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, দিল্লির দূষণের পিছনে অন্যতম বড় কারণ চাষের খেতে শুকনো খড় পোড়ানো ধোঁয়া। দিল্লির লাগোয়া পঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে ওই ধোঁয়া এসে জমছে দিল্লির আকাশে। দিল্লি-সহ নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা, গাজিয়াবাদ, গুরুগ্রামের আকাশ ভরে যায় এই খড় পোড়া ধোঁয়াতে। এই ধোঁয়ার সঙ্গেই যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণ সংস্থাগুলির বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিলে গিয়ে ঘন ধোঁয়াশা তৈরি করছে। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অন্তত আড়াই গুণ বেশি। শীতের মুখে ভাসমান এই কণার পরিমাণই চার গুণ ছাড়িয়ে গেছে।
মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর রাজধানীর বায়ুদূষণ সংক্রান্ত মামলায় দেশের শীর্ষ আদালত দিল্লিসহ পড়শি রাজ্যগুলিকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে। অবিলম্বে ফসলের গোড়া পোড়ানো বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি এস কে কউল ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ফসলের গোড়া পোড়ানোর পাশাপাশি যানবাহনের ধোঁয়াও দিল্লির দূষণের অন্যতম আর একটি কারণ। আগামী শুক্রবার ১০ নভেম্বর এই বিষয়ে শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতিরা।
গত ২০১৫ সাল থেকেই উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব এবং হরিয়াণায় ফসলের গোড়া, খড়কুটো পোড়ানো নিষিদ্ধ করেছিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাস্তবে তাতে রাশ টানা যাচ্ছে না।পরিবেশবিদরা বলছেন, চলতি বছরে খড় পোড়ানো ধোঁয়ার পরিমাণ প্রায় পাঁচ গুণ হয়েছে। দিল্লির বাতাসে যে পরিমাণ ধোঁয়াশা জমা হচ্ছে তাকে নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।