রবিবার ২৯ অক্টোবর ভারতীয় সময় সকালে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরলের কোচি-র কালমাসেরি-র এক কনভেনশন সেন্টারে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় সভা জিহোবাস উইটনেস চলার সময় আচমকাই পরপর তিনটি তীব্র বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে আঠারো জনের। আহতের সংখ্যা ৫০-এর বেশি।
রবিবারে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় জমায়েতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার দায় স্বীকার করে এদিনই আত্মসমর্পণ করেন এক ব্যক্তি। ত্রিশূরের বাসিন্দা ৪৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম ডোমিনিক মার্টিন। তিনি কোদাকারা থানায় গিয়ে ধারাবাহিক এই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছেন।
কালামাসেরির পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল এমআর অজিত কুমার জানান, গ্রামীণ ত্রিশূরের কোদাকারা থানায় গিয়ে ডোমিনিক মার্টিন নামে ওই ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করেন। ডোমিনিক দাবি করেছেন, এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় তার হাত রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, এদিন ওই কনভেনশন হলে যে ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রার্থনা চলছিল, তিনি নিজেও ওই একই গোষ্ঠীর সদস্য।
ডমিনিক আদতে গুজরাতের বাসিন্দা। ম্যাঙ্গালোর থেকে ডোমিনিক কান্নুর হয়ে আরিকোড যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। তার সঙ্গে একটি ব্যাগ ছিল যেটি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। তার ভিতরে কী কী রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডমিনিককে হেফাজতে নেওয়া হয়। তিনি মানসিকভাবে সুস্থ কিনা, তাও পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানান তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ডমিনিক ১৫ বছর দুবাইতে কাটিয়েছেন। মাস দুয়েক আগে দেশে ফিরেছেন তিনি। জেরায় তিনি জানিয়েছেন, কর্মসূত্রেই দুবাইতে গিয়েছিলেন। সেখানে ইলেকট্রিকের কাজ শেখেন তিনি। তার দুই সন্তানও দুবাইতেই থাকেন। দেশে ফিরে টিউশন পড়ানোর কাজ করছিলেন। কোচিতে বিস্ফোরণের পরই কোদাকারা থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেন ডমিনিক। তিনি দাবি করেছেন দুবাই থেকে মাস দুয়েক আগে ফিরেছিলেন এই ঘটনা ঘটানোর জন্যই।
তদন্তকারীদের অফিসারদের তিনি জানিয়েছেন, গত ১৬ বছর ধরে জিহোবাস উইটনেস নামে একটি ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। কালাসামেরির কনভেনশন সেন্টারে ওই ধর্মীয় গোষ্ঠীরই অনুষ্ঠান ছিল । সেখানেই তিনি বিস্ফোরণ ঘটান।
ডমিনিকের বক্তব্য, এই জিহোবারা খ্রিষ্টীয় মূলভাবধারার বিরোধী। তারা যা কাজ করে বা বলে, তা দেশবিরোধী। ডমিনিকের দাবি, এই জিহোবারা তরুণ মনে বিরূপ ভাবনা গেঁথে দিচ্ছে। মগজধোলাই করছে। দেশবিরোধী কার্যকলাপ করতে বাধ্য করছে। তাই তিনি এই সংগঠন থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন। জিহোবাদের ভাবনার বিরোধিতা করেছিলেন। তাই সেখানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলে আসেন।
তার এই দাবি সত্যি কিনা, তা যদিও এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। পুলিশ ওই ব্যক্তির বক্তব্যের সত্যতা খতিয়ে দেখছে।জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা বলছেন, একা একজনের পক্ষে গোটা এলাকা দেখেশুনে বিস্ফোরক লাগানো, রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে তা অপারেট করা সম্ভব নয়। ডমিনিকের সঙ্গে আরও অনেকের যোগ আছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দা অফিসাররা। ডমিনিক ইলেকট্রিকের কাজ জানেন ঠিকই, কিন্তু এত শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরি করার জ্ঞান তার ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডমিনিকের সঙ্গে কোনও আন্তর্জাতিক সংগঠন জড়িত কিনা তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
তিন দিনের এই ধর্মীয় সভার রবিবারই ছিল শেষ দিন। এদিন প্রার্থনার জন্য ওই কনভেনশন হলে উপস্থিত ছিলেন ২ হাজার মানুষ। পরপর তিনবার বিস্ফোরণ ঘটলে আতঙ্কে সেখান থেকে বেরোনোর চেষ্টা করতে শুরু করেন মানুষ। ভিড় ও তাড়াহুড়োই মানুষ বেশি আহত হন।
ঘটনার তদন্তের জন্য ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। এছাড়া এই বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে এনআইএ-র হাতে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের একটি দলও যাচ্ছে ঘটনাস্থলে। কেরল পুলিশ জানিয়েছে, হামলার জন্য ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছিল। টিফিন বক্সের মধ্যে ভরে রাখা হয়েছিল বোমাগুলি। হলঘরটি ইতিমধ্যেই সিল করে দিয়েছে পুলিশ।
রবিবারের এই পরপর বিস্ফোরণের পিছনে বড় কোনও জঙ্গি যোগ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এমন বিস্ফোরণের ঘটনার জেরে রাজধানী দিল্লি ও বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।
কেরলের বিস্ফোরণের ঘটনার পরই দিল্লি ও মুম্বই পুলিশকে সর্তক করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। দিল্লির জনবহুল এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে খবর। কোনও সন্দেহজনক ব্যক্তি বা কার্যকলাপ নজরে আসা মাত্রই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছে মুম্বইয়েও।
তদন্তকারী অফিসারদের মতে, নাশকতা ছড়াতেই এই হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা জানা না গেলেও, কোনও জঙ্গি সংগঠনের কাজ বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই জঙ্গি সংগঠনের আরও কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা সেটাও এখন তদন্তের বিষয়। দিল্লি ও মুম্বইয়ের শহরকে নিশানা করা হতে পারে বলেও মনে করছেন গোয়েন্দারা। তাই এই দুই শহরের নিরাপত্তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা বলছেন, একা একজনের পক্ষে গোটা এলাকা দেখেশুনে বিস্ফোরক লাগানো, রিমোর্ট কন্ট্রোলের সাহায্যে তা অপারেট করা সম্ভব নয়। ডমিনিকের সঙ্গে আরও অনেকের যোগ আছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দা অফিসাররা। ডমিনিক ইলেকট্রিকের কাজ জানত ঠিকই, কিন্তু এত শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরি করার জ্ঞান তাঁর ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডমিনিকের সঙ্গে কোনও আন্তর্জাতিক সংগঠন জড়িত কিনা তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে।