অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা


ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের ভিজিয়াঙ্গারাম জেলার কাছাকাছি ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। ২৯ অক্টোবর, ২০২৩।
ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের ভিজিয়াঙ্গারাম জেলার কাছাকাছি ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। ২৯ অক্টোবর, ২০২৩।

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটল রবিবার ২৯ অক্টোবর ভারতীয় সময় রাতে। অন্ধ্র প্রদেশের ভিজিয়াঙ্গারাম জেলার কাছাকাছি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে দুটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন।

বিশাখাপত্তনম-রায়গড় এবং বিশাখাপত্তনম-পালাসা গামী দুটি ট্রেন আচমকাই একই লাইনে চলে আসে। এর ফলেই মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় দু'টি ট্রেনের। সরকারিভাবে নিহতের সংখ্যা ১৩। আহতের সংখ্যা ৬০। তবে দুই ক্ষেত্রেই সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দুর্ঘটনা ঘটার পরে প্রথমেই স্থানীয় মানুষেরা হাত উদ্ধারকাজে হাত লাগান। তারপর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশাল পুলিশবাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। রাতে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন মোহন রেড্ডি ঘটনাস্থলে যত দ্রুত সম্ভব ত্রাণ এবং অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় প্রচুর অ্যাম্বুলেন্স এবং শুরু হয় উদ্ধারকাজ। পাশাপাশি রেলের তরফ থেকেও খোলা হয়েছে একাধিক হেল্পলাইন নম্বর।

দুর্ঘটনার কারণ

পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ছিল, সিগন্যালের গাফিলতিতেই এত বড় রেল দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে হল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান ছিল কোনও রেল কর্মচারীর ভুলেই ঘটেছে এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। সিগন্যালের ভুলেই বিশাখাপত্তনম বিজয়গড় প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সঙ্গে একই লাইনে চলে আসে বিশাখাপত্তনম পালাসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি। লাইন ব্রেকের জন্য অন্ধ্রের ভিজিয়াঙ্গারামের কাছে দাঁড়িয়েছিল প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি। সেই সময়ে তাকে ধাক্কা মারে এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এর ফলে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রেল সূত্রে খবর, এই দুর্ঘটনার কারণ হল ট্রেনচালকের সবচেয়ে বড় গাফিলতি। তাঁর ভুলেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

ট্রেনচালকের ভুলেই এই দুর্ঘটনার কারণ। ২৯ অক্টোবর, ২০২৩।
ট্রেনচালকের ভুলেই এই দুর্ঘটনার কারণ। ২৯ অক্টোবর, ২০২৩।

রবিবার সন্ধে ৭টা নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে। আলামান্দা এবং কণ্টকপল্লির মাঝে ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে ছিল বিশাখাপত্তনম-পালাসা প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি। সেই ট্রেনটিকে এসে ধাক্কা মারে বিশাখাপত্তনম-রায়গড় প্যাসেঞ্জার। এর জেরে লাইনচ্যুত হয় বেশ কয়েকটি কামরা।

ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বজিৎ সাহু বলেছেন, “বিশাখাপত্তনম-রায়গড় প্যাসেঞ্জার ট্রেনের লোকো পাইলটের ভুলেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। ওই ট্রেনের চালক সিগন্যালই দেখতে পাননি। সিগন্যাল না দেখেই দ্রুতগতিতে ট্রেন ছুটিয়েছিলেন। ফলে দুটি ট্রেন মুখোমুখি চলে আসে। বিশাখাপত্তনম-পলাসা প্যাসেঞ্জার ট্রেনটির দু'টি কামরা এবং বিশাখাপত্তনম-রায়গড়ের লোকো পাইলটের কোচটি লাইনচ্যুত হয়। রায়গড় স্পেশালের পাইলটের মৃত্যু হয়েছে দুর্ঘটনায়।” প্যাসেঞ্জার ট্রেনের চালকের এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিশাখাপত্তনম-পলাসা ট্রেনটির ১১টি বগি এবং বিশাখাপত্তনম-রায়গড় ট্রেনের ৯টি বগি। বাকিগুলি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলি এখনও ঘটনাস্থল থেকে সরানো যায়নি।

দুশ্চিন্তায় ভারতীয় রেল

ছ'মাস আগে ঘটেছিল করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। কয়েক দিন আগেই পাতালকোট এক্সপ্রেসে আচমকাই আগুন ধরে গিয়েছিল। এক বছরে এতগুলো রেল দুর্ঘটনা ক্রমশ দুশ্চিন্তায় ফেলছে ভারতীয় রেলের কর্তাদের। বারবার এমন দুর্ঘটনায় কপালে ভাঁজ পড়ছে রেল কর্তাদের। পাশাপাশি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণর প্রতিও সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরা।

এক বছরে এতগুলো রেল দুর্ঘটনা দুশ্চিন্তায় ফেলছে ভারতীয় রেলের কর্তাদের।
এক বছরে এতগুলো রেল দুর্ঘটনা দুশ্চিন্তায় ফেলছে ভারতীয় রেলের কর্তাদের।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও রেলমন্ত্রকের তরফে সাহায্য

এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার রাতেই তিনি কথা বলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডল (পূর্ববর্তী ট্যুইটার) থেকে জানানো হয় তিনি নিজে কথা বলেছেন রেলমন্ত্রীর সঙ্গে, পাশাপাশি গোটা ঘটনার উপর নজর রেখেছেন। পাশাপাশি মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণাও করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর তরফে।

কেন্দ্রের রেল মন্ত্রকের তরফেও আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করা হল। এক্ষেত্রে মৃতদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে ১০ লাখ টাকা। গুরুতর আহতদের দেওয়া হবে আড়াই লাখ এবং অপেক্ষাকৃত কম আহতদের দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা।

নিয়মিত ট্রেনসূচী বাতিল ও রুট বদল

রবিবার রাতেই বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়। পাশাপাশি সোমবার ৩০ অক্টোবর সকালেও বিশাখাপত্তনম থেকে ছাড়া এবং বিশাখাপত্তনমগামী বহু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু ট্রেন নির্দিষ্ট রুট বদল করে অন্য রুট ধরে। এর জেরে সপ্তাহের শুরুতেই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

রবিবার রাতে বিশাখাপত্তনম কোরবা এক্সপ্রেস, পালসা বিশাখাপত্তনম স্পেশাল ট্রেন, বিশাখাপত্তনম পারাদ্বীপ এক্সপ্রেস, বাতিল করা হয়। অন্যদিকে সোমবার রায়পুর বিশাখাপত্তনম রুটের ৪টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন, পারাদ্বীপ বিশাখাপত্তনম রুটের ২টি ট্রেন, কোরবা বিশাখাপত্তনম, রায়গড় বিশাখাপত্তনম, ভিজিয়াঙ্গাম বিশাখাপত্তনম স্পেশাল, বিশাখাপত্তনম থেকে ছাড়া ভিজিয়াঙ্গাম গুনুপুর স্পেশাল, এবং গুনুপুর থেকে ছাড়া ভিজিয়াঙ্গাম গুনুপুর স্পেশাল বাতিল করা হয়েছে।

XS
SM
MD
LG