অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের মহাকাশযান গগনযানের টেস্ট ড্রাইভের প্রস্তুতি, আগামী কয়েক দিনেই পাড়ি দেবে মহাশূন্যে


ভারতের মহাকাশযান গগনযান
ভারতের মহাকাশযান গগনযান

ভারতের চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্যের পরে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পরে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-র চেয়ারম্যান এস সোমনাথ ঘোষণা করেছেন, মহাশূন্যে পাড়ি দেওয়ার অভিযানের জন্য ভারতের মহাকাশযান গগনযানের টেস্ট-ড্রাইভ হতে চলেছে। রকেটের জ্বালানি পরীক্ষা চলছে। লঞ্চ প্যাডে বসেছে মহাকাশযান। সব ঠিক থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই মহাকাশে উড়ে যাবে গগনযান। তবে এখনই মানুষ নিয়ে উড়বে না এই রকেট। আগে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হবে। সেটা সফল হলেই মানুষ নিয়ে মহাকাশে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হবে।

বৃহস্পতিবার ১৯ অক্টোবর গগনযান-এর রকেটের ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনের সফল পরীক্ষা করে ইসরো ৭২০ সেকেন্ড বা ১২ মিনিটের জন্য। এত বেশি সময় ধরে গগনযান অভিযানের রকেটের ইঞ্জিনের পরীক্ষা ইসরো এর আগে করেনি। ইসরো জানিয়েছে, গগনযান অভিযানের জন্য যে যে লক্ষ্য নিয়ে ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন বানানো হয়েছে এ বারের পরীক্ষায় সেই সবকটি লক্ষ্যেই নিখুঁত ভাবে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। ইঞ্জিন খুব ভাল কাজ করেছে। এর পরেও রকেটের এই ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনের আরও চারটি পরীক্ষা করা হবে। সব মিলিয়ে পরীক্ষা করা হবে মোট ১ হাজার ৮১০ সেকেন্ড বা ৩০ মিনিট ১৬ সেকেন্ড ধরে।

মহাকাশে কোনও দুর্ঘটনার হাত থেকে ভারতীয় মহাকাশচারীদের বাঁচাতে ক্রু এস্কেপ সিস্টেম (সিইএস)-এর উপর ভরসা রাখছে ইসরো। মহাকাশে কোনও জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশে তৈরি এই উন্নত প্রযুক্তিই দেশের মহাকাশযাত্রীদের প্রাণ রক্ষা করবে বলে দাবি ইসরো-র।

ভারতের মহাকাশযান গগনযান
ভারতের মহাকাশযান গগনযান

‘ক্রু এস্কেপ সিস্টেম’ একটি ফাইটার জেটের চালক আসনের মতো কাজ করে। যেখানে এক জন চালক যে কোনও পরিস্থিতিতে জেট থেকে ওই আসন সমেত বাইরে আসতে পারেন। আসনে থাকা প্যারাসুটের মাধ্যমে নিরাপদে মাটিতে অবতরণ করতে পারেন।

ক্রু এস্কেপ সিস্টেমকে বলা হয় লঞ্চ অ্যাবোর্ট সিস্টেম। জরুরি অবস্থায় অবতরণের জন্য গগনযানে এই বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে ইসরো। যেমন এমার্জেন্সি এক্সিট থাকে এটিও তেমনই।

যদি যান্ত্রিক গোলযোগ হয় বা বিপদ আসে তাহলে নভশ্চরদের নিয়ে এই সিস্টেম মহাকাশযানের বাইরে বেরিয়ে আসবে। এরপরে রকেটে বিস্ফোরণ হলেও যাত্রীরা বেঁচে যাবেন। এর আগেও মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রক্রিয়ায় বড় বিপদ এসেছিল। মৃত্যু হয়েছিল মহাকাশচারীদের। এবার সেই বিপদ এড়াতেই এমন ব্যবস্থা রেখেছে ইসরো।

ক্রু এস্কেপ সিস্টেম অনেকটা ছোটোখাটো রকেটের মতো যেটি গগনযানের ভেতরেই থাকবে। এটি ১৫.৫ মিটার লম্বা এবং এর সামনের অংশে থাকবে তরল জ্বালানি। এর সঙ্গে থাকবে পাঁচ রকম মোটর। যদি কোনওকারণে গগনযান রকেটের কোনও ত্রুটি হয়, তাহলে এই রকেটের মতো অংশটা বিচ্ছিন্ন হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসবে। তারপর নিরাপদেই নেমে আসবে পৃথিবীতে।

গগনযানের যাত্রা হবে তিনটি পর্যায়ে। দু’টি আনম্যানড-মিশন এবং একটি ম্যানড-মিশন। প্রথম ‘ম্যানড মিশন’ মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে মাইলস্টোন হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন ইসরো-র চেয়ারম্যান এস সোমনাথ।

পৃথিবীর কক্ষে প্রদক্ষিণ করে তথ্য আনবে গগনযান। কারণ পৃথিবীর সর্বনিম্ন কক্ষপথে স্পেস স্টেশন বানানোর পরিকল্পনা আছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-র। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের মতো ভারতেরও নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরি হবে মহাকাশে। তার প্রস্তুতি দীর্ঘ সময় ধরেই চলছে।

কোভিড মহামারী ও লকডাউনের কারণে গগনযান মিশন পিছিয়ে গিয়েছিল। ইসরো-র স্পেস স্টেশন তৈরির পরিকল্পনাও থমকে ছিল একই কারণে। এবার জোরকদমে গগনযানকে মহাকাশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ভারতের নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরি হলে পৃথিবী থেকে যে নভশ্চররা মহাকাশে যাবেন তারা এই স্পেস স্টেশনেই বিশ্রাম নেবেন। সেখান থেকেই রকেটে চেপে পাড়ি দেবেন চাঁদে বা অন্য গ্রহে। একদিকে যেমন জ্বালানীর সাশ্রয় হবে, তেমনি পৃথিবী থেকে এত বেশি রসদ বয়ে নিয়ে যেতে হবে না। স্পেস স্টেশনে সব ব্যবস্থাই থাকবে।

XS
SM
MD
LG