বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন যে বাংলাদেশের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
গত বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর (যুক্তরাষ্ট্র সময়) ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন।
এ বছরের মে মাসের ২৪ তারিখ বাংলাদেশে সুষ্ঠু, ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নতুন ভিসা-নীতি ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর, এই নতুন ভিসা-নীতির আলোকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা চালু করার পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিতে শুরু করেছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।
এ প্রেক্ষাপটে সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি, তার দল ও সরকার যখন মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দীর্ঘ লড়াই করে বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার ও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করেছেন ও বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে তখন হঠাৎ কেন এধরণের স্যাংশন তা তিনি জানেন না। তিনি আরো দাবি করেন যে, বাংলাদেশেই এখন অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়েছে, তাই ভিসা স্যাংশন এর ফলে যদি (বাংলাদেশিরা) আমেরিকাতে আসতে না পারে তাতে "কিছু যায় আসে না"।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস, আমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে গুমের ঘটনার যে অভিযোগগুলো করেছে, সে ব্যাপারে তার সরকারের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারে তিনি সদ্য পাশ হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনের যে ধারাগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তারও জবাব দেন।
৩৫ মিনিটের এ সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আগামী জাতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার জন্য বিরোধীদলগুলোর দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ ব্যবস্থায় ফেরত যাবার কোনো সুযোগ নেই।
বিরোধীদলগুলোর বিশেষ করে প্রধান বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে অপরাধ করলে মামলা হবে।
"রাজনৈতিক মামলায়" সাজাপ্রাপ্ত প্রধান বিরোধী দলের অসুস্থ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমোদন দেয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য তাকে তার সাজা বর্তমানে স্থগিত করে বাড়িতে থাকার ও দেশে চিকিৎসা নেয়ার অনুমোদন যে এক সরকারি আদেশে বর্তমানে কার্যকর রয়েছে তা বাতিল করে, জেলে গিয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবসান ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার সংকট নিয়েও তিনি প্রশ্নের উত্তর দেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। ২৭ সেপ্টেম্বর (যুক্তরাষ্ট্র সময়) ওয়াশিংটন ডিসি-তে ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে তার এই সাক্ষাৎকারটি নেন শতরূপা বড়ুয়া।