বুধবার ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতের বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় বৈঠকের পর কংগ্রেস নেতা কেসি বেনুগোপাল জানিয়েছিলেন, ভারতের বেশ কিছু টিভি চ্যানেল ও বিশেষ করে তাদের কয়েক জন নিউজ অ্যাঙ্করের শো বয়কট করবেন তাদের জোটের নেতারা। এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারকে পাশে বসিয়ে বেনুগোপাল সরাসরিই অভিযোগ করেন যে এই সব সাংবাদিকরা পক্ষপাতদুষ্ট। এরা টিভি চ্যানেলে বসছে বিজেপির ন্যারেটিভ প্রচারের জন্য।
বৃহস্পতিবার ১৪ সেপ্টেম্বর জানা গেল, কোন কোন টিভি চ্যানেল এবং কোন কোন সাংবাদিকের শো তারা বয়কট করবেন তা প্রাথমিক ভাবে চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। মোটামুটি ভাবে ১৪ জন সাংবাদিক তথা নিউজ অ্যাঙ্করের তালিকা আপাতত তৈরি হয়েছে। এই সঞ্চালকদের মধ্যে রয়েছেন রিপাবলিক টিভির এডিটর ইন চিফ অর্ণব গোস্বামী , ভারত চব্বিশ-এর রুবিকা লিয়াকত, ইন্ডিয়া টুডে-আজ তক-এর সুধীর চৌধুরী এবং টাইমস নাও-এর গ্রুপ এডিটর নবিকা কুমার।
জোটের সমন্বয় কমিটির নেতারা ঠিক করেছেন এদের শোতে 'ইন্ডিয়া'-র শরিক দলের কোনও নেতা সামিল হবেন না। এই সাংবাদিকদের বিরোধী জোটের নেতারা কেউ বলছেন গোদি মিডিয়া কেউ বা বলছেন, মোদিয়া (মিডিয়ার অপভ্রংশ)।
এই চার সাংবাদিক ছাড়াও বিরোধী জোটের নেতারা আরও ১০ জনকে চিহ্নিত করেছেন। তারা হলেন, ইন্ডিয়া টুডে-আজ তক গ্রুপের চিত্রা ত্রিপাঠি, গৌরব সাওয়ান্ত, শিব অরুর, নিউজ-১৮ গ্রুপের অমিশ দেবগন, আমন চোপড়া ও আনন্দ নরসিংহ, টাইমস নাও-এর সুশান্ত সিনহা, ইন্ডিয়া টিভির প্রাচী দেশাই, ভারত এক্সপ্রেস-এর অদিতি ত্যাগী এবং ডিডি নিউজের অশোক শ্রীবাস্তব।
এই ব্যাপারে ইন্ডিয়া জোটের এক নেতা 'দ্য ওয়াল'-কে বলেন, “এই ১৪ জনকে বয়কট করে আসলে সংবাদমাধ্যমের উপরেও চাপ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। যাতে তারা নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনে বাধ্য হয়। কেবল মাত্র বিজেপির ন্যারেটিভ প্রচার না করে।”
তবে এ ব্যাপারে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা কংগ্রেসের পাল্টা সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, "সংবাদমাধ্যমের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা কংগ্রেস বহুদিন ধরে করে আসছে। জওহরলাল নেহরু বাক স্বাধীনতা রোধ করতে চেয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে বলতেন তাদের গ্রেফতার করতে বলেছিলেন। আর এ ব্যাপারে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। এমনকি রাজীব গান্ধীও মিডিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েমের চেষ্টা করেছিলেন।"
এর জবাবে অধীর চৌধুরী এদিন বলেন, "কংগ্রেস সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপারে কতটা উদার তা সাংবাদিকরাই ভাল জানেন। পেটোয়া চ্যানেল বয়কটের কথা শুনেই ভয় পাচ্ছে বিজেপি।"
পর্যবেক্ষকদের মতে, কংগ্রেস তথা বিরোধী জোটের মধ্যে অনেকেরই ধারণা হল বিজেপি এক শ্রেণির মিডিয়াকে দিয়ে নয়কে হয় করছে। তার মাধ্যমে জনমানসে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে দেশের প্রকৃত সমস্যার বিষয় থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছে। সম্ভবত সেই কারণেই ভারত জোড়ো যাত্রার সময়ে রাহুল গান্ধী কোনও টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেননি। তিনি কেবল ইউটিউবারদের সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন।
সংবাদ সূত্রে শুধু কিছু চ্যানেলকে বয়কট করাই নয়, বিরোধী জোটের নেতারা সোশাল মিডিয়াতে প্রচারের জন্য কৌশল নির্ধারণে বসতে চাইছেন। তাদের মূল লক্ষ্য হল, বিজেপি তথা মোদী বিরোধী সমালোচনায় অভিন্ন সুর তুলে ধরা এবং সরকারের উপর ঐক্যবদ্ধ ভাবে চাপ সৃষ্টি করা। সেই সঙ্গে বিজেপি যে প্রচার সোশাল মিডিয়ায় চালাচ্ছে তাকে মজবুত ভাবে মোকাবিলা করা।