ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকটি হবে আগামী শুক্রবার ৮ অগাস্ট বিকেলে। রীতি ভেঙে এই বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের, বাড়িতে বৈঠকের নজির নেই বললেই চলে। তবে কূটনীতির অঙ্গনে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ধরনের বৈঠকের অনেক নজির আছে, যা আন্তরিক সম্পর্কের বার্তা বহন করে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তিন দিনের সফরে শুক্রবার দুপুরে দিল্লি পৌঁছবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেদিনই ভারতীয় সময় বিকাল সাড়ে পাঁচটায় বৈঠক শুরু হবে তার।
পরদিন শনিবার ৯ অগাস্ট ভারতীয় সময় সকাল থেকে শুরু হবে জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির দু' দিনের সম্মেলন। বাংলাদেশ ওই গোষ্ঠীর সদস্য নয়। কিন্তু ভারত জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব পাওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশকেই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। যা দুই দেশের সম্পর্কের অনন্য উচ্চতায় পৌঁছনোর আর একটি দৃষ্টান্ত বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
শুধু তাই নয়, জি-২০ সম্মলেনের ব্যস্ততার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের জন্যও সময় বের করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাড়িতে বৈঠকের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশকে ‘নিকটজন’ বার্তাও দিয়েছে ভারত, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভোট আসন্ন। তার আগে ভারতের ভূমিকা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। দুই দেশেই একটি মহল থেকে বলার চেষ্টা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সম্পর্কে মোদী সরকার তাদের অবস্থান বদল করেছে। যদিও কূটনৈতিক মহলে এমন খবর নেই। বরং জি-২০ সামিটের আয়োজক দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে নরেন্দ্র মোদী সময় বরাদ্দ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য, যা খুবই তাৎপর্যপূ্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। তবে দুই প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততা এবং সম্মেলনের সূচির কারণে শেষ মুহূর্তে বৈঠকের স্থান পরিবর্তন অসম্ভব নয়।
কারণ, শুক্রবার আরও দুই রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-এর সঙ্গে বৈঠকটি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে। দুই রাষ্ট্র প্রধানের বৈঠকে পরমাণু চুক্তি, দ্রুতগতির বিমান কেনার বিষয়ে কথা হবে। এছাড়া ভারতীয়দের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আরও সহজে পাওয়া নিয়েও আলোচনা চায় নয়া দিল্লি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার বৈঠক করবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট অ্যামানুয়েল ম্যাক্রোঁ-র সঙ্গেও। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট দিল্লি থেকেই চলে যাবেন ঢাকা। সেই কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ দেশগুলির সমাপ্তি অনুষ্ঠান শেষ করেই স্বদেশে উড়ে যাবেন। বিকলে ঢাকায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাবেন তিনি।
হাসিনা-মোদীর বৈঠকে এবার কোনও চুক্তি সম্পাদন হওয়ার কথা নয়। তবে সংবাদ সূত্রে খবর কয়েকটি চুক্তি নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর কথা হবে। এছাড়া কয়েকটি প্রকল্পের যৌথ উদ্বোধন নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা আছে। ফলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে সরাসরি দুই দেশের লাভ-লোকসানের সম্পর্ক নেই। কিন্তু সফরের ব্যস্ততার মধ্যে দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠককেই দু'পারের কূটনৈতিক মহল গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।