ভারতের ৫০ সদস্যের একটি বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দল সোমবার রাশিয়ায় ৪ দিনের সফর শুরু করতে যাচ্ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে, ভারত-রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার প্রচেষ্টায় রয়েছে দেশ দুটি। এ সপ্তাহের শুরুতে রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মানতুরভ নয়া দিল্লি সফর করেন। এ সময় দুই দেশের মন্ত্রীরা জানান, ভারত ও রাশিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়েও আলোচনা করছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মস্কো, ভারতের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত রাশিয়া, এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করছে; এমন সময়ে ভারতের বৃহত্তম তেল সরবরাহকরী দেশ হয়ে উঠলো রাশিয়া।
ভারত, মস্কোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেয়নি। আর, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও সরাসরি নিন্দা জানায়নি। তবে, দেশটি আলোচনার মাধ্যমে এই সংঘাত নিরসনের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমান্বয়ে রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টির আহ্বান জানানো সত্বেও, ভারত, রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে।রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়া ভারতের বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দলটি, মস্কো ও সেইন্ট পিটার্সবার্গে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত, রাশিয়ায় রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।মস্কো থেকে বিশাল পরিমাণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করছে নয়াদিল্লি। এ কারণে ২ দেশের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। ভারত চাইছে রপ্তানি বাড়ানোর মাধ্যমে এই ঘাটতি হ্রাস করা।
২০২১ সালের পর রাশিয়া থেকে আমদানির পরিমাণ ৪ গুণ বেড়ে ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে ভারত থেকে মস্কোতে রপ্তানির পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলারের কম। পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, দেশটি ভারত থেকে উৎপাদিত পণ্য, বৈদ্যুতিক যন্ত্র ও মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির চেষ্টা করছে।
স্নায়ুযুদ্ধের আমল থেকে ভারতের মিত্র রাশিয়া। কয়েক দশক ধরেই ভারতের প্রতিরক্ষা উপকরণের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশও রাশিয়া। নয়া দিল্লি, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে গত ২ দশকে কৌশলগত অংশীদারিত্ব দৃঢ়তর করেছে। তারপরও ভারত, রাশিয়ার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
পশ্চিমা দেশগুলো চাইছে, ভারত রাশিয়ার ওপর আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করুক, যাতে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে আরো ব্যাপক পরিসরে একঘরে করে রাখা যায়। তবে নয়া দিল্লি রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে অটল সংকল্প দেখিয়ে এসেছে।