অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

"জামা ছেঁড়ার প্রসঙ্গ নিয়ে বেশি হাইলাইট করা হচ্ছে, আমাকে সেক্সুয়ালি এসল্ট করেছে"


গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের সামনে দিয়ে রিকশা করে যাবার সময় এক অজ্ঞাতনামা মোটর সাইকেল রাইডারের দ্বারা যৌন নিপীড়ন ও শারীরিক হেনস্তার শিকার উম্মে হাবিবা অরনী ট্রমার কারণে এখনও ঠিকমত খেতে বা ঘুমাতে পারছেন না। শনিবার ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে এই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমার জামা ছেঁড়ার প্রসঙ্গ নিয়ে বেশি হাইলাইট করা হচ্ছে...আমাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছে, সেক্সুয়ালি এসল্ট করেছে।"

কি হয়েছিল সেদিন?

ঢাকার ধানমন্ডি থেকে বুধবার (৯ জুন) রাত সাড়ে এগারোটায় পুরান ঢাকায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রিকশায় উঠেন তিনি। হেডফোন কানে কিছুটা অন্যমনষ্ক ছিলেন। বরাবরের মত সায়েন্সল্যাব-নিউমার্কেট-নীলক্ষেত পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের কাছাকাছি এলে পেছন থেকে বাইক চালিয়ে রিকশার বাম দিক ঘেঁষে এগিয়ে আসে মুখখোলা হেলমেট পরা এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। রাত তখন সোয়া বারটা।

লোকটি বাম হাত দিয়ে বাইকের ক্লাচ ধরে রেখে ডান হাত দিয়ে খামচে ধরে চলমান রিকশায় বসা অরনীর বুকের কাছটা।। আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে উঠেন অরনী। আশেপাশে অনেক মানুষ থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি, ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন তিনি। এক পর্যায়ে অরনীর পরনের কামিজটি গলার কাছে ছিঁড়ে যায়।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অরনী বলেন, “আমি কোনও অর্নামেন্টস পরা ছিলাম না। হাতে ফোন ছিল, ব্যাগ ছিল। সে কোনো কিছু ধরেনি। ...আমাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছে, সেক্সুয়ালি এসল্ট করেছে।"

মানসিকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ঘটনার আকস্মিকতায় বিপর্যস্ত অরনী বাইকের নম্বর প্লেটও খেয়াল করতে পারেননি । “তখন ফার্স্ট অ্যান্ড মেইন কনসার্ন ছিল, আমার সেফলি বাসায় পৌঁছাতে হবে। সে আবার এসে আমাকে এটাক করতে পারে,” বলেন তিনি। শেষে রাত পৌনে একটার দিকে সেই রিকশা করেই বাসা পৌছান অরনী।

ফেসবুকে অরনীর পোস্ট

বাসায় ফেরার পর প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে পরনের ছেঁড়া জামার ছবি সহ নিজের ফেসবুক একাউন্টে একটি পোস্ট করেন রাত একটা এগার মিনিটে। পোস্টে লেখেন, "এই দেশে থাকতে চাইলে বিনিময়ে রাস্তাঘাটে গায়ে হাত দেয়ার পারমিশন দিতে হবে? নাকি এখন সন্ধ্যার পর বাসার বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিবো??! আর কারে গিয়ে বললে একটু স্বাভাবিক সিকিউরভাবে এদেশে বাঁচতে পারবো?"

ফেসবুক পোস্টে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে কমেন্ট করেন সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার আহসান ভূঁইয়া। মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রথমে মামলার ব্যাপারে সম্মতি না দিলেও পরে আইনজীবীর আশ্বাসের কথা জেনে ভরসা পেয়ে রাজি হন অরনীর মা।

কি করছে আইন ও প্রশাসন?
পরদিন শুক্রবার (১০ জুন) শাহবাগ থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ একটি দুই-সদস্য-বিশিষ্ট টিম ঘটনাস্থলে পাঠায়। অরনী পুলিশকে জায়গা চিহ্নিত করে ঘটনার বিবরণ দেন।

ওদিকে, মামলা দায়েরের পর পুলিশ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন অরনীর আইনজীবী আহসান ভূঁইয়া। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আসামিকে শেষ পর্যন্ত ধরা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ব্যারিস্টার ভূঁইয়া। "তারপরও মামলা করা প্রয়োজন, যাতে এমন ঘটনায় অন্তত পক্ষে কেউ যাতে চুপ না থাকে।...প্রস্পেক্টিভ ক্রিমিনালরা কিন্তু একবার হলেও চিন্তা করবে যে তাদের ধরা পরার একটা চান্স থাকবে” বলেন তিনি।”

এখন কেমন আছেন অরনী

ট্রমা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান অরনী। তিনি বলেন, “আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম। এজমা এটাক হচ্ছিল। পেইন হচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতে পারছি না, খেতে পারছি না এখনও.”। পরিবারের সবাই পাশে থেকে মানসিক শক্তি যোগাচ্ছে বলে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আগে থেকেই রাতে চলাচলে অভ্যস্ত অরনী। একা একা ঘুরতে অনেক পছন্দ করেন। রেডিও-টিভিতে লেট নাইট শো কিংবা ভয়েজ ডাবিং-এর কাজের জন্য প্রায়ই রাত করে বাড়ি ফিরতে হত তাকে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ ভাবতেন, এখানে আগে কখনও ভয় পেতে হয়নি। এখন শাহবাগ থানা থেকে রিকশা করে একা বাড়ি ফিরতেও শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।

ব্যারিস্টার ভূঁইয়া ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, মিডিয়াতে খবর আসার পর সবার টনক নড়েছে। ওসি সাহেব তাকে বলেছেন, এসপি সহ উপরের মহল থেকে চাপ আসছে। পুলিশ স্টেশন থেকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীকে শনাক্ত করার জন্য তাদেরকে থানায় যেতে বলা হয়েছে।

সবাই যেভাবে বিষয়টা নিয়ে কথা বলছে, তা আরও অনেক ভিক্টিমিকে সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন ব্যারিস্টার ভূঁইয়া। তিনি বলেন, “শতকরা ১৫ ভাগ সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্টও যদি কমে, আমরা মনে করতে পারবো, উই হ্যাভ এচিভড সামথিং।”

XS
SM
MD
LG