অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভাঙার পর পদত্যাগ করেছে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা


শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে রবিবার (৩ এপ্রিল ২০২২) কারফিউ চলাকালে একদল লোক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়।
শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে রবিবার (৩ এপ্রিল ২০২২) কারফিউ চলাকালে একদল লোক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়।

প্রেসিডেন্ট এবং তার প্রধানমন্ত্রী ভাই ছাড়া শ্রীলঙ্কার পুরো মন্ত্রিসভা রবিবার (৩ এপ্রিল) তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করেছে। কারণ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান করতে চায়। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্থগিত করার পরও বিক্ষোভ থামাতে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান সরকার।

১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতার পাওয়ার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি এবং একটানা বিদ্যুৎহীন অবস্থাসহ দক্ষিণ এশীয় দেশটি খাদ্য, জ্বালানি ও অন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র ঘাটতির সম্মুখীন৷

শিক্ষামন্ত্রী দিনেশ গুনাবার্দেনা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ছাড়া মন্ত্রিসভার ২৬ জন মন্ত্রী গভীর রাতে একটি বৈঠকে পদত্যাগের চিঠি জমা দিয়েছেন।

এই পদক্ষেপটির ফলে প্রেসিডেন্টের জন্য সোমবার একটি নতুন মন্ত্রিসভা নিয়োগের পথ পরিষ্কার হয়েছে এবং পদত্যাগকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে আবার নিয়োগ করা হতে পারে।

রাজধানী কলম্বোতে বিক্ষোভকারীদের একটি দল প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে সোমবার সকাল পর্যন্ত দেশব্যাপী কারফিউ জারির পাশাপাশি দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।

বিরোধী আইন প্রণেতা এবং তাদের শত শত সমর্থক রাজধানীর স্বাধীনতা স্কয়ারে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল দিয়ে সজ্জিত সেনারা তাদের থামাতে চেষ্টা করে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্ল্যাকআউট

ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার ও অন্য সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে অ্যাক্সেস ব্লক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ব্ল্যাকআউট শ্রীলঙ্কার অন্য এলাকায় বেশ কয়েকটি ছোট বিক্ষোভকে আটকাতে পারেনি।

কেন্দ্রীয় শহর পেরাদেনিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে, যদিও দেশের অন্য অংশে বিক্ষোভ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে।

বেসরকারি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রকের প্রধান পদত্যাগ করেছেন।

অভ্যন্তরীণ কোন্দল

ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের ফলে সরকারের অভ্যন্তরে ফাটল ধরেছে এবং প্রেসিডেন্টের ভ্রাতুষ্পুত্র নমাল রাজাপাকসে আংশিক ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের নিন্দা করেছেন।

“আমি কখনই সোশ্যাল মিডিয়া ব্লক করাকে সমর্থন করব না”, ক্রীড়ামন্ত্রী নমাল বলেন।

তিনি রাজাপাকসে পরিবারের তিন সদস্যের মধ্যে একজন যারা শেষে পদত্যাগ করেন। বাকি দুজন হলেন অর্থমন্ত্রী বাসিল এবং বড় ভাই কৃষিমন্ত্রী চামাল।

একটি ছোট দলও এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।

এই পদক্ষেপটি সরকারের টিকে থাকায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে আইনত দেশের জরুরি অবস্থার অধ্যাদেশকে প্রলম্বিত করার সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

কলম্বোতে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা গণতান্ত্রিক ভিন্নমতকে দমন করার জন্য জরুরি আইনের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে, তারা গভীরভাবে ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন।

বৈদেশিক মুদ্রার গুরুতর অভাবের কারণে শ্রীলঙ্কা তার ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে কোভিড মহামারির কারণে পর্যটন ও বৈদেশিক আয় থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজস্বও হ্রাস পেয়েছে।

আমদানিনির্ভর দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনারও অর্থ নেই।

শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আর্থিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচির জন্য আলোচনা করছে।

XS
SM
MD
LG