বিনোদনের পাশাপাশি স্বাধীনতাযুদ্ধ ও গণমানুষের আত্মত্যাগ তুলে ধরতে চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বিনোদনের পাশাপাশি চলচ্চিত্র সমাজ সংস্কার, মানুষকে শিক্ষা দেওয়া, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা এবং দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে পারে।”
বুধবার (২৩ মার্চ) রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ২০২০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “চলচ্চিত্র জীবনের আয়না এবং চলচ্চিত্রই পারে সমাজকে সংস্কার করতে।…সমাজ সংস্কারে বিরাট অবদান রাখতে পারে এই চলচ্চিত্র, জীবনের দর্শন আসে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, ইতিহাসের প্রবাহ জানা যায় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।”
তিনি বলেন, “জনগণের মধ্যে অনেক তথ্য স্থানান্তর করতে পারে চলচ্চিত্র এবং এটি ইতিহাসের বাহক। চলচ্চিত্র অনেক অজানা বিষয় জানার সুযোগ দেয়। এতে অনেক হারিয়ে যাওয়া বিষয় সামনে আসতে পারে।…চলচ্চিত্র সমাজ থেকে অনিয়ম ও শৃঙ্খলা দূর করতে ভূমিকা রাখতে পারে।”
চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেশ ও জনগণের প্রতি দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা প্রকাশ করা যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা জানান, তিনি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত করতে চান। এর জন্য উপজেলা পর্যায়ের সিনেমা হলগুলোকে সিনেপ্লেক্সে রূপান্তর করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “সরকার এক হাজার কোটি টাকার তহবিল তৈরি করেছে।” তিনি নতুন প্রজন্মের জন্য পুরানো সিনেমাকে ডিজিটালে রূপান্তরের ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন রাইসুল ইসলাম আসাদ।
২৭টি বিভাগে ৩২ জন বিজয়ীর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিজয়ীদের মধ্যে সম্মানজনক এই স্বীকৃতি তুলে দেন।
২০২০ সালে আনোয়ারা বেগম ও রাইসুল ইসলাম আসাদ যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। “গোর” (দ্য গ্রেভ) ও “বিশ্বসুন্দরী” সিনেমা যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে।
সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “আড়ং” শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে।
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে “বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়”।
“গোর” চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন গাজী রাকায়েত। তার “গোর” ১০টি বিভাগে পুরস্কারের জন্য এবং চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত “বিশ্বসুন্দরী” চলচ্চিত্রটি ৮টি বিভাগে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।
“বিশ্বসুন্দরী” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন সিয়াম আহমেদ এবং একই চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন ফজলুর রহমান বাবু।
দীপান্বিতা মার্টিন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন “গোর” চলচ্চিত্রের জন্য।
শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন অপর্ণা ঘোষ “গন্ডি” চলচ্চিত্রের জন্য।
“বীর” চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ খলনায়কের পুরস্কার পান মিশা সওদাগর।
শ্রেষ্ঠ শিশু অভিনেতা বিভাগে “গন্ডি” চলচ্চিত্রের জন্য মুগ্ধতা মোর্শেদ এবং “আড়ং” চলচ্চিত্রের জন্য শিশু অভিনেতা বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে মোহাম্মদ শাহাদাত হাসান বাঁধন।
শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন বেলাল খান।
“বিশ্বসুন্দরী” চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালকের (মরণোত্তর) পুরস্কার জিতেছেন মোহাম্মদ সহিদুর রহমান। একই চলচ্চিত্রে “তুই কি আমার হবি রে” গানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ গায়কের পুরস্কার জিতেছেন মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ইমরান।
“বিশ্বসুন্দরী” চলচ্চিত্রের “তুই কি আমার হবি রে” গানের জন্য দিলশাদ নাহার কণা এবং “বীর” চলচ্চিত্রের “ভালোবাসার মানুষ তুমি” গানের জন্য সোমনূর মনির কোনাল যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ নারী গায়িকার পুরস্কার পান।
“তুই কি আমার হবি রে” গানটির জন্য কবির বকুল শ্রেষ্ঠ গীতিকার পুরস্কার পেয়েছেন।
শ্রেষ্ঠ গল্পকার ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন “গোর” চলচ্চিত্রের জন্য গাজী রাকায়েত। শ্রেষ্ঠ সংলাপের পুরস্কার পেয়েছেন “গন্ডি” চলচ্চিত্রের জন্য ফাখরুল আরেফিন খান।
শ্রেষ্ঠ সম্পাদকের পুরস্কার পেয়েছেন “গোর” চলচ্চিত্রের জন্য মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম। শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশকের পুরস্কার পেয়েছেন উত্তম কুমার গুহ। শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকের পুরস্কার পেয়েছেন “গোর” চলচ্চিত্রের জন্য যৌথভাবে পঙ্কজ পালিত ও মোহাম্মদ মাহবুব উল্লাহ। শ্রেষ্ঠ শব্দ গ্রাহকের পুরস্কার পেয়েছেন “গোর” চলচ্চিত্রের জন্য কাজী সেলিম আহমেদ। শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা পুরস্কার পেয়েছেন এনাম তারা বেগম ও শ্রেষ্ঠ মেকআপ আর্টিস্টের পুরস্কার পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী বকুল।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন।