শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের পুজামণ্ডপ, বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার প্রতিবাদে আজ ঢাকার শাহবাগ উত্তাল ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ৪ ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে। এই সময় তারা সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও সংখ্যালঘু মানুষদের নিরাপত্তা দেওয়াসহ সাত দফা দাবি জানায়। এসব দাবি পূরণে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠন ইসকন বাংলাদেশ।
সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় জড়ো হন জগন্নাথ হলসহ বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। তারা একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় গিয়ে সাড়ে ১০টার দিকে অবরোধ শুরু করেন। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড়ের চারদিকের রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের স্লোগান ছিল, ‘সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, জঙ্গিবাদের ঠাঁই নাই’, ‘জঙ্গিবাদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আমার ভাইয়ের খুনি কে, ফাঁসি দাও দিতে হবে’ ইত্যাদি।
অবরোধ কর্মসূচি শেষে সাত দফা দাবি ঘোষণা করেন জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক ও আন্দোলনের সমন্বয়ক জয়দীপ দত্ত। দাবিগুলোর মধ্যে আছে, সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার মন্দিরগুলোর সংস্কারের ব্যবস্থা করা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ড ও লুটপাটের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদে আইন করে মন্দির ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন করা। জয়দীপ দত্ত বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হয়, অথবা সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করেন, পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। এই কর্মসূচি আরও কঠোর হবে।’ অবরোধে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা, সাবেক প্রাধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকার ও আইন বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল ও ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শ্রীপদ চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী।
অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য যারা দায়ী, সেই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এমন হামলার ঘটনা দেখতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।