হাজারের বেশি অতিথি আপ্যয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজশাহীতে ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে বট ও পাকুড় গাছের। অন্য ১০টি বিয়ের মতোই সানাইয়ের সুর আর ঢাকের শব্দের সঙ্গে উলুধ্বনি মুখরিত পরিবেশে বিয়ের এই আনন্দ ধারায় বাড়তি ছিল নাচ, গান। পুরোহিত এরই মাঝে সারতে থাকেন বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিকতা। শনিবার রাজশাহীর খড়খড়ির শ্রী শ্রী গোপালদেব ঠাকুর মন্দিরে ছিল এই বিয়ের মহাআয়োজনে আমন্ত্রণ ছাড়াও ভীড় জমিয়েছিলেন অনেকে।
রাজশাহী থেকে সাংবাদিক কাজী শাহেদ জানান, ১১৩ বছরের পুরনো এ মন্দির চত্বরে ১৭ বছর আগে পাশাপাশি লাগানো হয়েছিল গাছ দুটি। হিন্দু শাস্ত্রমতে, পাশাপাশি বট-পাকুড় গাছ থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। এই রীতি মেনেই ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে গাছ দুটির। বটকে বর, পাকুড়কে কনে ধরে নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। বিয়ের আগে বটের নাম রাখা হয় ‘বিজয়’ আর পাকুড় নাম হয় ‘বনলতা’।
মন্দিরে প্রবেশের পথে বিয়ের জন্য বানানো হয়েছিল গেট। বট-পাকুড়সহ গোটা মন্দির চত্বরকে সাজিয়ে তোলা হয় । অতিথিদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য তৈরি করা হয় প্যান্ডেল।এক হাজারেরও বেশি অতিথির জন্য রান্না করা হয় পোলাও, সবজি ঘণ্ট আর পায়েস। জলপাইয়ের আচার এবং পাপড় দেওয়া হয়েছিল আলাদা করে।
নারায়ণ পূজার মধ্য দিয়ে দুপুর ১২টায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুরে নারীরা পুকুরে গিয়ে গঙ্গাপূজা সেরে আসেন দল বেঁধে । জল দিয়ে ভরে আনেন ঘটক। সবাই মিলে পালের বাড়ি থেকে আনেন হাঁড়ি। বিকাল ৪টা থেকে ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের নিবেদন। কিছুক্ষণ পরই একদল নারী আসেন বরযাত্রী হয়ে। গেটে অভ্যর্থনা জানানো হয় তাদের। বাদ্য-বাজনায় আনন্দ মুখরিত হয় চারপাশ। সব বয়সী মানুষই নেচে নেচে আনন্দ প্রকাশ করেন। অতিথিরা বর-কনের চারপাশ ঘিরে দাঁড়ান। বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন পুরোহিত পুলক আচার্য । গোধুলীলগ্নে মন্ত্র পড়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। সবাই অভিনন্দন জানান দুই পক্ষকে।
বিধান চন্দ্র সরকার ও আরতি রাণী সরকার দম্পতি বিয়েতে বটের বাবা-মা হয়েছিলেন । পাকুড়ের বাবা-মা হন বিশ্বজিৎ সরকার ও কনিকা রানী সরকার দম্পতি । কনিকা বললেন, ‘বাস্তবে আমি দুই ছেলের মা। ১০ দিন আগে পাকুড়ের মা হই। মেয়ের বিয়েও দিলাম। এ অনূভূতি অন্যরকম। মেয়ের বিয়ে দিলে যেমন আনন্দ লাগে, আজ আমার তেমনই লাগছে।’
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার জানান, এ আয়োজনের কারণ হচ্ছে হিন্দুশাস্ত্রে আছে বট-পাকুড় একসঙ্গে থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। তাই হিন্দু শাস্ত্রমতেই বিয়ে সম্পন্ন হলো। বট-পাকুড় এখন যুগ যুগ ধরে পাশাপাশি থাকবে।’