রাজতন্ত্রের ওপর শক্ত ও স্থায়ী প্রভাব ছিল প্রিন্স ফিলিপের

রাজতন্ত্রের ওপর শক্ত ও স্থায়ী প্রভাব ছিল প্রিন্স ফিলিপের

ব্রিটেনের দীর্ঘতম অধিপতি রানী এলিজাবেথের গ্রীক বংশোদ্ভূত স্বামী প্রিন্স ফিলিপ ৯৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। রাণীর প্রতি দায়িত্ববোধের জন্য ডিউক অফ এডিনবারা হিসাবে তিনি  স্মরণীয়।

ব্রিটেনের দীর্ঘতম অধিপতি রানী এলিজাবেথের গ্রীক বংশোদ্ভূত স্বামী প্রিন্স ফিলিপ ৯৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। রাণীর প্রতি দায়িত্ববোধের জন্য ডিউক অফ এডিনবারা হিসাবে তিনি স্মরণীয়।

তিনি ছিলেন একজন সমসাময়িক মানুষ, ব্রিটেনের সর্বকালের অসাধারণ এক যুবরাজ।

ফিলিপ মাউন্টব্যাটেন যখন নৌ ক্যাডেট ছিলেন তখন রাজকুমারী এলিজাবেথের সাথে দেখা হয় তাঁর। তিনি ছিলেন লাজুক প্রকৃতির এক রাজকন্যা। ১৯৪৭ সালে তাঁরা বিয়ে করেন।

Your browser doesn’t support HTML5

রাজতন্ত্রের ওপর শক্ত ও স্থায়ী প্রভাব ছিল প্রিন্স ফিলিপের


"ইয়ং প্রিন্স ফিলিপ" বইয়ের লেখক ফিলিপ এড বলেন, তিনি যখন রানী হন, তখন ফিলিপের জন্যে তাঁর নৌবাহিনীর জীবন ছেড়ে দেয়া খুব কঠিন মনে হয়েছিল।

"তিনি ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে অত্যন্ত সফল, অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ অফিসার ছিলেন। তাঁকে নৌবাহিনীর প্রধান হওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। তাঁকে তাঁর স্ত্রীর জন্যে দ্বিতীয় মর্যাদাপূর্ণ হয়ে উঠতে হয়। তিনি খুব পুরুষালী চরিত্রের ছিলেন এবং তিনি এমন লোক ছিলেন না যিনি খুব সহজে রানীর পেছনে পেছনে হাঁটার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে আয়ত্ত করে নেবেন”।

এক সাক্ষাত্কারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তিনি তার ভূমিকা সম্পর্কে কী ভাবেন, যুবরাজ ফিলিপ জবাব দিয়েছিলেন, "আমি তা করি না।"

লেখক ফিলিপ এড বলেন, "তিনি অত্যন্ত দৃঢ় কর্তব্যবোধের সাথে বেড়ে ওঠেন এবং তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর প্রথম এবং সর্বাগ্রের দায়িত্ব হচ্ছে রানীকে তাঁর কাজের পক্ষ সমর্থন করা এবং এটিই ছিল তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তালিকার শীর্ষে।"

সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে, যুবরাজ ফিলিপ একটি রাজপরিবারের ভালো মন্দের রক্ষণাবেক্ষণ করে জনগণের নজরে স্থায়ী আসন গেড়েছিলেন। ১৯৯৭ সালে রাজকুমারী ডায়ানার মৃত্যুর ঘটনাও তিনি সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করেন।

প্রিন্স ফিলিপ তাঁর হাস্যরস বোধের জন্য পরিচিত ছিলেন। যখনই দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে তাঁর ভূমিকা পালনের জন্যে কোনও পরামর্শ বাদ দিতে হোতো, তিনি হাস্যরস ব্যবহার করতেন। তিনি একবার বলেছিলেন যে ১৯৫৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আট শব্দ দিয়ে দেয়া বক্তব্য তাঁর সেরা বক্তৃতা; যাতে তিনি বলেছিলেন, "আমি মেলবোর্নের অলিম্পিক গেম উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিলাম।"

তাঁর কৌতুক মাঝে মাজে বিপদও ঘটাত। তবে রাজতন্ত্রের ওপর তাঁর শক্ত ও স্থায়ী প্রভাব ছিল, সময়ের সাথে সাথে তা বদলে দেয়ার জন্য একটি প্রয়াস ছিল।

ইতিহাসবিদ, কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ম্যাথু গ্লেনক্রস এ প্রসঙ্গে বলেন, "বিষয়টি ফিলিপ সর্বদা নিজের করে দেখতেন, ধারণাটি এমন যে, রাজতন্ত্রের বিকশিত হওয়া উচিত।উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫৩ সালে দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের জন্য ক্যামেরা রাখার পক্ষে ছিলেন তিনি। আপনি হয়তো ভাবছেন তাঁর রক্ষণশীলতাঁর কারণে লোকে তাঁকে স্মরণ করবে। আসলে তা নয়; তিনি টেলিভিশনকে মনে করতেন ভবিষ্যতের রূপ। মানুষ তাদের রাজতন্ত্র সম্পর্কে আরও জানতে চায়। "

প্রিন্স ফিলিপ ২০১৭ সালে সরকারী রাজকীয় দায়িত্ব থেকে অবসর নেন ।

এক বছর পর, তিনি স্যান্ড্রিংহামে রয়্যাল ফ্যামিলির এস্টেটের কাছে গাড়ি চালানোর সময় মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়েন।

তাঁর সর্বশেষ সর্বজনীন উপস্থিতি ছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে উইন্ডসর ক্যাসলে।

স্ত্রী এবং পিতা হিসাবে তাঁর ভূমিকা পরিপূর্ণ করে, প্রিন্স ফিলিপ রাজতন্ত্রের ওপর যে প্রভাব ফেলেছিলেন, তাতে ১২শ বছরের একটি রাজতন্ত্র জনগণের কাছে আরও দৃশ্যমান এবং প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।

লন্ডন থেকে হেনরি রিডওয়েলের প্রতিবেদন থেকে সেলিম হোসেন ভিওএ নিউজ।