যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২৩ সালের জন্য ডিভি লটারি কার্যক্রম শুরু করল

ফাইল - বিক্ষোভকারীরা হোয়াইট হাউসের কাছে ভিসা লটারি বিজয়ীদের পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে সাইনবোর্ড ধরে রেখেছে। ২৪ মার্চ ২০২১। (ছবি-জন মিঞ্চিলো)

যুক্তরাষ্ট্র সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন অর্থবছরের শুরুতে ডাইভার্সিটি ভিসা লটারি কার্যক্রম শুরু করেছে। অন্যদিকে ভিসা প্রক্রিয়া বিলম্বের কারণে অপেক্ষা করতে করতে আফগানিস্তান, মিশর, পেরু, ইরান এবং অন্যান্য দেশের পূর্বের কয়েক হাজার লটারি বিজয়ীদের আমেরিকায় নতুন জীবনের আশা ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

বাইডেন প্রশাসন বুধবার ঘোষণা করেছে যে ২০২৩ সালের জন্য ডাইভার্সিটি ইমিগ্র্যান্ট ভিসা প্রোগ্রামের যা গ্রীন কার্ড লটারি নামে পরিচিত সেটির নিবন্ধন শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অধিবাসীদের বৈচিত্র তুলে ধরার প্রয়াসে কংগ্রেস বিশ্বব্যাপী অভিবাসীদের জন্য প্রতি বছর ৫৫,০০০ গ্রীন কার্ড অনুমোদন করে থাকে।

যেকোনো অর্থবছর শুরুর বেশ আগে থেকেই নিবন্ধন শুরু হয়- এই ক্ষেত্রে যেমন ২০২৩ সালের নিবন্ধন আগে থেকে শুরু হয়েছে যাতে করে আবেদনপত্রগুলো প্রক্রিয়াকরণের জন্য যথেষ্ট সময় থাকে । কিন্তু প্রক্রিয়াকরণের চলমান বিলম্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠেছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

একদিকে যেমন নতুন আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, বর্তমানে যে আবেদনপত্রগুলো তাদের হাতে রয়েছে তার প্রক্রিয়াকরণ পিছিয়ে পড়েছে।এই আবেদনগুলোর অধিকাংশ প্রাক্তন ট্রাম্প প্রশাসনের সময় দায়ের করা হয়েছিল এবং মহামারীর কারণে প্রক্রিয়াকরণের গতি আরও কমে গেছে।

মিশরের ৩৫ বছর বয়সী ইতিহাসবিদ এবং ২০২১ সালের ডাইভারসিটি ভিসা বিজয়ী সামারের মতো মানুষের জন্য, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের অনুমোদন পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিজ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একজন স্পষ্টভাষী এই সমালোচক ভিওএকে তার পুরো নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।

সামার বলেন"আমি যে অর্থবছরের বিজয়ী তার সময়সীমা ২০২১ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে। আমার ডাইভার্সিটি ভিসা সম্পর্কে যে প্রশ্নগুলো আমি করেছিলাম তার বেশিরভাগের উত্তর যুক্তরাষ্ট্র সরকার দেয়নি"। "এই অভিবাসনের সুযোগ আমার পরিবারের জন্য বিলাসিতা নয়। ২০১৬ সাল থেকে আমার পরিবার এবং আমি পুলিশী হয়রানির শিকার হচ্ছি। এই অভিবাসনের সুযোগ আমাকে এবং আমার পরিবারকে একটি মানবিক ও নিরাপদ জীবন শুরু করতে সাহায্য করবে।"

ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা পরবর্তী বছরে স্থানান্তরিত হয় না। পুরো প্রক্রিয়াটি এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে, তিন সন্তানের মা ভ্রমণ নথি পাওয়ার আশায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য অন্যান্য ডাইভার্সিটি ভিসা বিজয়ীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ভিওএ- কে পাঠানো একটি ইমেইলে পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেন, "এলোমেলোভাবে একজনকে বেছে নেয়ার মানে এই নয় যে তিনি ভিসা পাবেন বা ভিসা পাওয়ার জন্য ইন্টারভিউ এর সুযোগ পাবেন।লটারির মাধ্যমে বেছে নেয়ার মানে এতটুকুই যে সেই ব্যক্তি ডিভি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য।"

পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যাখ্যাটি সামারকে তেমন স্বস্তি দিতে পারেনি।

তিনি বলেন, "আমার স্বামী এবং আমি ২০০০ সাল থেকে ডাইভার্সিটি ভিসার জন্য আবেদন করে আসছি। আমাদের তিনটি বাচ্চা আছে। আমরা সব পদ্ধতি অনুসরণ করেছি এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় ফর্ম এবং নথি জমা দিয়েছি। এমনকি আমরা ইইউতে চলে যাবার চেষ্টা করেছি কিন্তু ভিসা পাইনি।"

ডাইভার্সিটি ভিসা কর্মসূচির প্রক্রিয়াতে বিগত কয়েক বছর ধরেই সমস্যা হচ্ছে।

২০১৭ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের ঘোষণা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলি থেকে লোকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে বাধা হিসেবে কাজ করে।

তারপর, ২০২০ সালের মার্চ মাসে, ট্রাম্প করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিশ্বজুড়ে দূতাবাস বন্ধ করে দেন। তার প্রশাসন পরবর্তীতে কিছু অভিবাসী ভিসার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং যুক্তি দেয় যে এটি আমেরিকান অর্থনীতি রক্ষার জন্য প্রয়োজন।

যার ফলস্বরূপ, ভিসা লটারির হাজার হাজার বিজয়ীকে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে বাধা দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় নথি অনুসারে, ২০২০ সালের গ্রীষ্মে দূতাবাসগুলি পুনরায় চালু হতে শুরু করলে, কর্মকর্তাদের ডাইভার্সিটি ভিসা কর্মসূচির প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়।