দুই দশকের বেশি সময়ে বিশ্বের বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের সম্পদমূল্য ২০১৮ সাল পর্যন্ত বেড়ে চার গুণ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যানগ্রোভের সম্পদমূল্য বাড়লেও বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদে প্রাকৃতিক পুঁজির অবদান তেমন নেই। মোট সম্পদ প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেড়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে মূলত মানব পুঁজির অবদানের ওপর ভর করে । বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি ১৯৯৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৪৬টি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে ‘দ্য চেঞ্জিং ওয়েলথ অব নেশনস ২০২১’ শিরোনামে বিশ্ব সম্পদের পরিবর্তন নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
তিন ধরণের পুঁজিকে (প্রাকৃতিক পুঁজি, মানব পুঁজি ও উৎপন্ন পুঁজি) পরিমাপের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদের হিসাব করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে বিশ্বের সম্পদ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মূলত এশিয়ায় দ্রুত প্রবৃদ্ধির কারণে মধ্যম আয়ের দেশগুলো উচ্চ আয়ের দেশগুলোর প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে চলে গেছে। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্পদও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
বাংলাদেশের উপকুল প্রতিরক্ষায় সুন্দরবনের গুরুত্ব সব সময় অপরিসীম। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ বাংলাদেশকে রক্ষায় প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এই প্রাচীরকে টিকিয়ে রাখতে হবে। রক্ষা করতে হবে পরিবেশ। বিশ্বব্যাংকের মতে, গত ২৩ বছরে বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সম্পদমূল্য ৪০২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৩ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। যা ১৯৯৫ সালে ছিল ২০৪ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংক ম্যানগ্রোভের বিস্তৃৃতি, বন্যার ঝুঁকি, বন্যা থেকে ধ্বংসের ঝুঁকিতে থাকা উৎপন্ন পুঁজির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে এর মূল্য ও পরিবর্তন পরিমাপ করে থাকে। ২০০৯ সালের মে মাসে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটারের ঘূর্ণিঝড় আইলায় সুন্দরবন তছনছ হয়েও বাংলাদেশের জীবন ও সম্পদের প্রতিরক্ষা দিয়েছে । ঘূর্ণিঝড় সিডরের শক্তি ছিল তার দ্বিগুণেরও বেশি। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুন্দরবন-সংলগ্ন উপকুলীয় এলাকায় আঘাত হানে । এতে সাড়ে ৩ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়। বনাঞ্চল দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সেই ঝড়ে, ভেঙে পড়ে হাজার হাজার গাছপালা। তারপরও অনেক মানুষ রক্ষা পায় সুন্দরবনের কারণে।
এই বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন বলেন,"বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। সবকিছুর বিরুপ প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ছে। সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে আমাদের। বনাঞ্চল ঘেরা সুন্দরবন শেষ হলে মানুষ বিপন্ন হবে। প্রকৃতি হারিয়ে যাবে। মানুষের জানমালের জন্য সুরক্ষা সুন্দরবন দিয়ে আসছে। এই কারণে বাড়ছে সম্পদমূল্য।"
বিশ্বব্যাংক বলছে, ম্যানগ্রোভ ছাড়া বেড়ে যাওয়া বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ আরও ব্যাপক হতে পারত। ২০১৮ সালে বন্যা থেকে ৬০ লাখ মানুষকে রক্ষার পাশাপাশি আরও ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের উৎপন্ন পুঁজির ক্ষতি থেকে বিশ্বকে বাঁচিয়েছে ম্যানগ্রোভ। বৈশ্বিকভাবে উৎপন্ন পুঁজির পরিমাণ বেড়েছে, তাই সেই পুঁজির প্রতিরক্ষায় থাকা ম্যানগ্রোভের মূল্যও বেড়েছে।