বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৫ বছর বয়সে পা রাখছেন আজ ২৮ সেপ্টেম্বর। এবারকার জন্মদিনে তিনি অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে। পুত্র, নাতি, নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটবে তাঁর। তবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এ উপলক্ষ্যে বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছে। নিউইয়র্কে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন। অন্যদিকে ঢাকায় সকালে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন নেছার প্রথম সন্তান শেখ হাসিনার জন্ম ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের ১৪তম প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষা জীবন শুরু টিকাটুলি নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। এরপর আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালে বিয়ে হয় ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর। স্বামী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া ছিলেন বিজ্ঞানী। দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পিতাকে হারানোর সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করেছিলেন। পরে ভারতে নির্বাসিত জীবন অতিবাহিত করেন। সেখানে অবস্থানকালে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে এসে দলের দায়িত্ব নেন। ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথম বিরোধী দলের নেতা হন। ১৯৯১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ২০০১ সালে ভোটে পরাজিত হলে আবার বিরোধী দলের নেতা হিসেবে যোগ দেন সংসদে। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি আটক হয়ে কারাবরণ করেন। এর আগে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় একাধিকবার গৃহবন্দী ছিলেন।
শেখ হাসিনা তৃতীয় দফা ক্ষমতায় আসেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে একক জয় নিয়ে। এরপর তিনি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। বাংলাদেশে টানা ক্ষমতায় থাকার গৌরব অর্জন করেছেন। অতীতে এভাবে টানা কেউ ক্ষমতায় থাকেননি।
শেখ হাসিনা দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বারবার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন। তার ওপর হামলা হয়েছিল ১৯বার। ২০০৪ সালের একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসের বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান ৩০তম। ২০১৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় নাম এসেছে শেখ হাসিনার। লিডার্স ক্যাটাগরিতে ২৭ ব্যক্তির মধ্যে তাঁর অবস্থান ২১তম। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের মধ্য দিয়ে তাঁর নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনার সামনে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাঁর সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন। শেখ হাসিনার আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে দেশ-বিদেশে আনীত প্রশ্ন-অভিযোগের জবাব এবং এ ব্যাপারে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ।
এবারকার জন্মদিন নিয়ে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু বলেছেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে বিশ্বে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রজ্ঞা, মেধায় তিনি নিজস্ব উচ্চতা তৈরি করেছেন।
আজকের জন্মদিনে কী অনুষ্ঠান করছেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমরা ব্যাপক কিছু কখনো করি না। এবার শুধু আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
দলের আরেকজন নেতা, সাংগঠনিক সম্পাদক ছয়বারের এমপি মীর্জা আজম বলেন, শেখ হাসিনা পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও রোহিঙ্গাদের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়ে ইতিহাস তৈরি করেছেন। এভাবে সবাই পারেন না।
শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব যিনি টানা ১২ বছর প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে কাজ করেছেন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেন, তিনি কখনো আনুষ্ঠানিকতা পছন্দ করতেন না। তিনি নীরবে দিনটি কাটাতেন। দলের নেতা-কর্মীরা আসতেন। দেখা করতেন।