নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার কর্মব্যস্ত সময়  

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতিসংঘের মহসচিব আন্তোনিও গুতেরেস (জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের সৌজন্যে)

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে ১৯ শে সেপ্টম্বর রাতে নিউ ইয়র্কে পৌঁছুনোর পর থেকে অত্যন্ত কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার ২৩শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন জাতিসংঘের মহসচিব আন্তনিও গুতেরেস। মহসচিব টেকসই উন্নয়ন, জলবাযু বিষয়ক কর্মতত্পরতাএবং বহু-পাক্ষিকতার প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের প্রশংসা করেন। মহাসচিব এবং প্রধানমন্ত্রী শান্তিরক্ষাসহ জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

তা ছাড়া একই দিন শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সদরদপ্তরে , “ জাতিসংঘের খাদ্য ব্যবস্থা শীর্ষক এক শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন পর্যাপ্ত খাদ্য প্রাপ্তি হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার যা নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি আরও বলেন বিশ্ব খাদ্য ব্যবস্থার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবেশিক গুরুত্ব রয়েছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যা হবে এক হাজার কোটি সুতরাং এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য আমাদের বাড়তি খাদ্য উত্পাদন করতেই হবে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কস্টারিকা, সিয়েরা লিওন এবং স্পেনের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে, “ জাতিসংঘের অভিন্ন কর্মসূচীর বাস্তবায়ন : সমতা ও অন্তন্ভুক্তি লাভের পদক্ষেপসমূহ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন।

শেখ হাসিনা মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সুলেহ এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়ান জুযান ফুকের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হন।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত হোয়াইট হাউজের কভিড -১৯ বিষয়ক এক ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এই মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের কর্মতত্পরতার বিষয়টি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন আরও উন্নত ভবিষ্যত্ নির্মানের জন্য স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীকে আরও উন্নত করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণ করতে হবে। উদ্ভাবন, চাকরি সৃষ্টি ও বিনিয়োগের উপর জোর দিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে এগিয়ে যেতে হবে এবং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থবহ মোকাবিলা করতে হবে।

বুধবার দিনে আরও পরের দিকে শেখ হাসিনা দেশান্তরী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন। শেখ হাসিনা বলেন সেই ২০১৭ সাল থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সব অধিবেশনে ‌এবং বৈঠকে এই সংকট নিরসনের জন্য তিনি টেকসই সমাধানের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়ে আসছেন।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ পরিষদের সভাপতি আয়োজিত নারী নেতৃত্ব বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে বাংলাদেশের উদ্যোগ ও অগ্রগতির কথাটি তুলে ধরেন এবং সেই সঙ্গে বলেন যে কভিড-১৯ এই প্রচেষ্টায় কতটা বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।

তিনি মঙ্গলবার কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ খালেদ আল হামাদ আল সাবাহ এবং সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লভফেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন।

তা ছাড়া জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যারা প্রাণ ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের স্মরণে জাতিসংঘ পিচ মেমোরিয়ালে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে একটি বাগানে বৃক্ষ রোপন করেন এবং একটি বেঞ্চ বঙ্গবন্ধুর নামে উত্সর্গ করেন।

শেখ হাসিনার জাতিসংঘে উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ একটি শান্তি সমাবেশের আয়োজন করছে। তবে বিরোধী বিএনপি কালো পতাকা প্রদর্শন করে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।