কড়া নিরাপত্তায় বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি

ঢাকায় সংসদ ভবনের সামনে, দেশের বিজয় দিবসের ৫০ তম বার্ষিকীর তিন দিন আগে, একটি পতাকা সমাবেশের সময় লোকেদের হাতে বাংলাদেশের একটি বিশাল পতাকা।১৩ ডিসেম্বর ২০২১। (ছবি-রয়টার্স/মোহাম্মদ পনির হোসেন)

কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সমাপনী উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এই দুই উপলক্ষ সামনে রেখে ১৬ ও ১৭ই ডিসেম্বর নানা কর্মসূচি পালিত হবে। বাংলাদেশ সরকারের এই আয়োজনে অংশ নিতে বুধবার ঢাকা আসছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে ইতোমধ্যে তার সফরসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এছাড়া বিজয় দিবসের নিয়মিত আয়োজন প্যারেড অনুষ্ঠানে এবার অংশ নিচ্ছে চারটি মিত্র দেশ।জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর এই প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। এতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর অংশ নেয়। এবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তাকারী ভারত, যুদ্ধে সমর্থন দেয়া রাশিয়া ও প্রথম স্বীকৃতি দেয়া দুই দেশ ভুটান ও মেক্সিকোর প্রতিনিধি দল কুচকাওয়াজে অংশ নেবে।

বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ১৫ থেকে ১৭ই ডিসেম্বর তিনদিন সংসদ ভবন ও সংলগ্ন এলাকা, সংসদ ভবন থেকে ৩২ নম্বরসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ নিরাপত্তায় পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াট ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকবে।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম।ডিএমপি কমিশনার বলেন,"বিজয় দিবস ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে সংসদ ভবনের আশপাশের এলাকার প্রতিটি ভবনে পোশাকে ও সাদা পোশাকে থাকবেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আমন্ত্রিত অতিথিদের নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে তা কঠোরভাবে পালন করা হবে।" তিনি জানান, প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে সাতটি দেশের ৩০২ জন বিদেশি অতিথি অংশ নেবেন।তাদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, মুজিববর্ষের সমাপনী এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আসছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ। প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হিসাবে থাকবেন তার সহধর্মিণী ও কন্যা।ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, দুইজন সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঢাকা আসছেন।

মঙ্গলবার তুরস্ক থেকে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রেসিডেন্ট কোবিন্দের প্রথম বাংলাদেশ সফর প্রস্তুতির বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এবারের সফরে কোনও চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হবে না। তবে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।

মন্ত্রী জানান, আবহাওয়া ঠিক থাকলে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী স্পেশাল ফ্লাইটটি বুধবার দুপুরের আগে আগেই ঢাকায় পৌঁছাবে। বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ অতিথিকে স্বাগত জানাবেন। বিমানবন্দর থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রামনাথ কোবিন্দ। সেখান থেকে ফিরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন। বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে। ওই দিনই বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। সফরের দ্বিতীয় দিন ১৬ই ডিসেম্বর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভারতের প্রেসিডেন্ট ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানিয়েছেন, সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে ৪টায়। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ পড়াবেন। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। পরে আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা অংশ নেবেন। পরের দিন একই স্থানে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।