ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির তাবড় তাবড় ব্যক্তি ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো যখন অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের সূচনা ও ভূমি পূজা নিয়ে ব্যস্ত, আজ সেই দিনেই ভারতের সংবিধানে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাসূচক ৩৭০ ধারা লোপ করার বর্ষপূর্তি হল। একই সঙ্গে এই দিনে জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্য হিসেবে না রেখে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছিল, আর লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে আর একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্ গত বছর এই দিনে সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা রাজ্যের উন্নতির জন্য বাধা সৃষ্টি করছে। এই ধারা লোপ পেলে দেশের মূল ধারার সঙ্গে কাশ্মীর যুক্ত হতে পারবে এবং কাশ্মীরের উন্নতি হবে। ছবিটা কী দাঁড়িয়েছে এক বছর পরে?
অতি সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছিলেন যে এক বছরে কাশ্মীরে জঙ্গিপনা কমেছে, পাথর ছোঁড়া কমেছে এবং সেখানে শান্তি বিরাজ করছে। জঙ্গিপনা কমেছে সেটা যেমন সত্যি, কিন্তু সেটা টাকার এক পিঠ। অন্য পিঠে আর একটি ভয়ংকর সত্য রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে যে, সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসী হামলা কমেছে কারণ, বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু এই সত্যটাও অনস্বীকার্য যে কাশ্মীরি তরুণরা হতাশা থেকে, ক্ষোভ থেকে, জঙ্গি দলে নাম লেখাচ্ছেন। সেইসঙ্গে অর্থনীতি এখন একটা দুর্বিষহ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এখনও সেখানে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করার উপায় নেই। এখনও সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বহু জায়গায় বিচ্ছিন্ন।
গত বছর অগাস্ট থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। তার পর যদিবা এই পরিষেবা চালু হয়েছে টুজি আর ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে, কিন্তু ফোরজি ইন্টারনেট এখনও চালু হয়নি। গোয়েন্দা সূত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে খবর ছিল, ইন্টারনেট পরিষেবা পুরোপুরি খুলে দিলে জঙ্গিরা তার সুযোগ নেবে। সুতরাং ফোরজি চালু করতে করতেও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। গত বছর আমরা কথা বলেছিলাম কলকাতায় কর্মরত কাশ্মীরি যুবক সয়ীদ আনজারের সঙ্গে। তিনি সেদিন খুব ক্ষুব্ধ ছিলেন, দুঃখিত ছিলেন তার পরিবারের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারছিলেন না বলে। এখনও কিন্তু বলতে গেলে সেই একই অবস্থা রয়ে গিয়েছে। যখন-তখন যে খুশি টেলিফোনে বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছেন না। কী বলেছিলেন সয়ীদ আনজার?
সয়ীদ আনজারের কথায়, কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ ধারা তুলে নিয়েছেন কাশ্মীর থেকে, কিন্তু আমাদের অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। আমি এত দূরে পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কলকাতায় কাজ করছি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ওঁরা কেমন আছেন, কী করছেন জানতে, আমি কেমন আছি সে কথা জানাতে, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই তা সম্ভব হয়ে উঠছে না, যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ। এ ছাড়া কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক কমে গিয়েছে, রোজগারের সুযোগ কমেছে, ব্যবসাপাতি প্রায় বন্ধ, পর্যটন নেই। সুতরাং সব দিক থেকেই কাশ্মীরের অবস্থা এক কথায় বলা যায় ভালো নেই। তবে কাশ্মীরিরা এখনও সুদিনের আশায় দিন গুনছেন। দীপংকর চক্রবর্তী, ভয়েস অফ আমেরিকা, কলকাতা
Your browser doesn’t support HTML5