কভিড ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে আমেরিকানদের আশ্বস্ত করতে চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা

দু'বছর আগে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল যে, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য শীর্ষ যে দশটি হুমকি রয়েছে, তার মধ্যে নতুন ভ্যাকসিন নিতে মানুষের দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া ছিল একটি ।কভিড ১৯ মহামারী বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আগেই কিন্তু এই ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বিষয়ে ভিওএর সংবাদদাতা ক্যারল পিয়ারসন তার এই প্রতিবেদনে জানাচ্ছেন যে, বর্তমানে কভিড ১৯ মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা বহু কষ্ট করে একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পেরেছেন, কিন্তু সেই টিকা নিতে বহু মানুষ যথেষ্ট দ্বিধাগ্রস্ত এবং এটি নিতে রাজি করানো একটা সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকরা কীভাবে আমাদের এই দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে কাজ করছেন, তা নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন।

একটি পিউ গবেষণা কেন্দ্রের এবং অন্যটি গ্যালাপ, দুটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে যে, ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ আমেরিকানরা এই টিকা নিতে চাইছেন না।

যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃস্থানীয় সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অ্যান্টনি ফাউসি অনুমান করেছেন যে, herd immunity আনতে হলে ৮৫ শতাংশ আমেরিকানদের এই ভ্যাকসিন নিতে হবে। একটি জনসংখ্যার মধ্যে একটি সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার পরে বহু মানুষকে যথেষ্ট পরিমাণে টিকাদানের মাধ্যমে সেই রোগকে প্রতিরোধ করার এক বিশেষ ক্ষমতা গড়ে তোলা সম্ভব হয়, এবং তখনই বলা হয় যে herd immunity অর্জন করা যায়।

ফিলাডেলফিয়ায় জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় নিযুক্ত প্রযুক্তিবিদদের দল এবং দমকল বিভাগের চিকিৎসকদের প্রায় অর্ধেকেরও বেশী মানুষ ভ্যাকসিন না নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।ফিলাডেলফিয়া ফায়ার কমিশনার অ্যাডাম থিয়েল বলেন, "আমরা আশা করি সময়ের সাথে সাথে আরও বেশি লোককে টিকা দেওয়া সম্ভবপর হবে, এবং আমরা আরও অনেক মানুষকে টীকা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বোঝাতে পারব যাতে আমাদের আরও অনেক সদস্য এই ভ্যাকসিন গ্রহণে রাজি হন।"

রোগ নিয়ন্ত্রক ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসির মতে, যুক্তরাষ্ট্রে কভিড-১৯ এ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তবুও সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ১০ জন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানের এর মধ্যে মাত্র ৪ জন, এশিয়ান আমেরিকানদের ১০ জনের মধ্যে ৮ জন, এবং শ্ব্বেতাঙ্গ ও হিস্পানিক আমেরিকানদের মধ্যে ১০ জনের মধ্যে ৬ জন এই টিকা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ফিলাডেল্ফিয়া দমকল বিভাগ থেকে ডেমেত্রিও ওলিভিয়েরি বলেন, "সংখ্যালঘুরা এটি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন এবং আমাদের এটি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হওয়ার অধিকার রয়েছে।"

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে আমেরিকানদের আশ্বস্ত করতে তথ্য প্রচার করার জন্য সবাইকে আহ্বান করছেন।এপ্রিল টিমস হলেন একটি ক্লিনিকাল নিউরোসাইকোলজিস্ট অর্থাৎ স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, যিনি বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যের উপর বর্ণবাদের প্রভাব নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন। তিনি বলেন, "এই সমস্যাটি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের আরও ভালভাবে কাজ করা দরকার যাতে মানুষ আরও বেশি বেশি করে এই টীকা নিতে রাজি হয়।"

আমেরিকান বোর্ড অব ইন্টারনাল মেডিসিনের অন্তর্ভুক্ত চিকিত্সকরা নিজেরাই কভিড ১৯ এর ভ্যাকসিন নিয়ে সেই ছবি ও ভিডিও পোস্ট করছেন।মানুষজনকে নিশ্চিত করতে যে এই টীকা যথেষ্ট নিরাপদ আমেরিকান বোর্ড অব ইন্টারনাল মেডিসিন যে অভিযান চালাচ্ছেন, এটি তারই একটি অংশ। আমেরিকান বোর্ড অব ইন্টারনাল মেডিসিন সংগঠনের প্রধান ডাঃ রিচার্ড ব্যারন বলেন, "আমরা আশা করছি যে এই দেশের চিকিত্সকরা তাদের পরিবারগুলির সাথে, রোগীদের সাথে, তাদের সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে যোগাযোগ রাখছেন এবং তারা যদি পদক্ষেপ নেন, এবং নেতৃত্ব দেন এবং মানুষকে দেখান যে, তারা শুধু এটি করতে রাজি নন, এটির জন্য গর্বিতও বটে, এবং অন্যান্য মানুষদের এই টীকা নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন, তবে আমরা আশা করি যে, আমরা সকলে একসাথে যাত্রা করে যে লক্ষে পৌঁছতে চাইছি, সেখানে অবশ্যই পৌঁছতে পারব। "

যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর সংখ্যার এত মারাত্মক হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে টীকার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় রাজ্যে ডিজনিল্যান্ড একটি গণ টিকা দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানের আয়োজন করে সেটির পরিচালনা করছে। আর এক রাজ্য অ্যারিজোনায়, টিকা দেওয়ার জায়গাগুলিতে ন্যাশনাল গার্ড অর্থাৎ জাতীয় রক্ষাবাহিনী সহায়তা করতে পদক্ষেপ নিয়েছে।

মহামারীটি তখনই শেষ হবে যখন একটি বোতলে ভরা ভ্যাকসিনটি মানুষের শরীরে ঢোকানো সম্ভব হবে।

Your browser doesn’t support HTML5

ক্যারল পিয়ারসনের প্রতিবেদনটি পড়ে শোনাচ্ছেন জয়তী দাশগুপ্ত