র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে?

‘ইআরএফ সংলাপে’ অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। (ছবি- মানবজমিন)

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা্র ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি নিয়ে কিছুটা উদবেগ তৈরি হয়েছে। পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, কোনো পরিস্থিতিতেই ব্যবসায়ীরা বাজার হারাতে চান না।

নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে চিন্তা থাকলেও বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসায় রপ্তানিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। নিষেধাজ্ঞা ইস্যুর পাশাপাশি নতুন করে ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়ায় রপ্তানি নতুন করে শঙ্কায় পড়েছে বলেও নেতারা মনে করছেন।

বুধবার ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘ইআরএফ সংলাপে’ অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিজিএমইএ সভাপতি। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি শঙ্কা প্রকাশ করলেও এ নিয়ে বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি। এ বিষয়ে সংগঠনের সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, তাদের শঙ্কা হলো এই নিষেধাজ্ঞার কারণে যদি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান তাহলে রপ্তানি কমে যেতে পারে। তবে এ ধরনের কোনো বিষয় এখনো স্পষ্ট নয়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম অবশ্য মনে করছেন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এই মুহূর্তে ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলার মতো কোনো পরিবেশ হয়নি। বিশেষ করে সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। চিঠিপত্র আদানপ্রদান হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, সরকার পরবর্তী কি উদ্যোগ নেয় এবং আলোচনায় কতটুকু ফল আসে।

ওদিকে ইআরএফ সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, "বৃহত্তম এই বাজারে তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা পেতো না। এখনো পাচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেসব শর্ত দিয়েছিল সেগুলো পোশাক মালিকরা ও সরকার বাস্তবায়ন করেছে। কমপ্লায়েন্স বা নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে এদেশের উদ্যোক্তারা প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। বিশ্বের নিরাপদ কারখানা এখন বাংলাদেশে। ১৫৩টি গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে বাংলাদেশে। ব্যবসায়ীরা তাদের কাজটি করেছেন। এখন জিএসপি দেয়া না দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়"। তিনি বলেন, "দেশটির জিএসপি সুবিধা দেয়ার সঙ্গে শুধু শর্ত বাস্তবায়ন নয়, রাজনীতিও জড়িত"।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বের হয়ে যাওয়া নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন নন। কারণ এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইতিমধ্যে বিজিএমইএ, সরকার ও ক্রেতা দেশগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। দক্ষতা উন্নয়ন, বিনিয়োগ বাড়ানো, পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ফলে কোটা ও শুল্কমুক্ত সুবিধাহীন বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের টিকে থাকা নিয়ে আপাতত কোনো সংশয় দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে, আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ করা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারক প্রথম তিনটি দেশের একটি বাংলাদেশ। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডগুলো বিদায়ী বছরের ৮ মাসে ৫ হাজার ৪৩ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক আমদানি করে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ৪৩২ কোটি ডলার বা ৩৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। এই আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। পরের বছর করোনার কারণে রপ্তানি কমে দাঁড়ায় ৫২২ কোটি ডলারে।

ইআরএফ’র সংলাপে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, "এই নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ী হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রত্যাশা যে, কারখানায় উৎপাদন ও পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হয়- এমন কোনো কর্মসূচি যাতে তারা না নেন। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে সেই পরিবেশ থাকতে হবে"।

ফারুক হাসান বলেন, বর্তমানে তাদের কৌশল হচ্ছে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিকাল অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারের সুবিধা নেয়া। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৬ সালের পরে যে বাড়তি তিন বছর শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধায় রপ্তানির সুযোগ দেবে, আলোচনার মাধ্যমে তা বাড়ানো। বিজিএমইএ ইইউ'র কাছে ১০ বছরের জন্য এই সুবিধা চায়। এরপর বিজিএমইএ ইইউ'র সঙ্গে জিএসপি প্লাস নিয়ে আলোচনা করবে।

সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমত বেড়েছে আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে। এছাড়া করোনার সময়ে ক্রেতাদের অনেক দাবি দেশের রপ্তানিকারকরা রেখেছেন। বিশেষ করে পরে ডেলিভারি, দেরিতে মূল্য পরিশোধ, ডিসকাউন্ট ইত্যাদি সুবিধা দেয়া হয়েছে। যে কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে রপ্তানিকারকদের একটি সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ফলে এখন ক্রেতারা তাদের বাড়তি চাহিদার পণ্য বাংলাদেশ থেকেই নিচ্ছেন।

ওদিকে সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি বাড়লেও সারাবিশ্বে নতুন করে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় নতুন করে রপ্তানি আদেশ কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন পোশাক শিল্প মালিকরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ৩০শে ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠকও হয়েছে।

বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজীম বলেন, ওমিক্রনের কারণে নতুন করে ক্রয়াদেশ বাতিল হয়নি। কিন্তু নতুন ক্রয়াদেশ আসছে না। কারণ ইউরোপে সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে।