যুক্তরাষ্ট্র এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী নয়। বাণিজ্য বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তির আগ্রহ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক চিঠিতি এ তথ্য জানিয়েছেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম।
রাষ্ট্রদূতের স্বাক্ষর করা চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত এমন দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য পছন্দ করে না। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ২০টি দেশের সঙ্গে এ ধরনের এফটিএ করেছে। বেশির ভাগ এফটিএ সম্পন্ন হয়েছে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এখানে অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক বিষয় গুরুত্ব পায়নি তেমন একটা।
১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঠানো চিঠির বিষয় নিশ্চিত করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমানে উন্নত দেশগুলোয় শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর পরবর্তী তিন বছর এ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এরপর দেশের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে এখনকার মতো আর শুল্ক সুবিধা পাওয়া যাবে না। এজন্য সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করার কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ করার উদ্যোগ এরই অংশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে শুল্ক প্রধান বাধা নয়। শুল্ক কমালেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়ে যাবে বলে অভিজ্ঞতা বলছে না। তৈরি পোশাকসহ সীমিতসংখ্যক রপ্তানি পণ্য দিয়ে খুব বেশি প্রবৃদ্ধি আশা করাও যাবে না। এ ছাড়া দেশটির কাছে এফটিএ প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে গেলে মেধাস্বত্ব, শ্রম ইস্যুসহ নানা শর্তের মুখে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে। তবে এর পরও সরকার আগামী টিকফা ফোরামে দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্যের প্রস্তাবটি তুলতে পারে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপনকান্তি ঘোষ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমল থেকেই দ্বিপক্ষীয় মুক্ত-বাণিজ্যের নীতি থেকে সরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। সরকার বদল হলেও সে নীতির তেমন পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। তবে আমরা আমাদের বাণিজ্য সম্ভাবনা বিবেচনা করে দেশটির সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে এগিয়ে যাব।’
সচিব আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা কোনো শুল্ক সুবিধা পাই না। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যে ধরনের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিচ্ছে তা-ও কখনো তাদের কাছ থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সে কারণে আমরা দ্বিপক্ষীয় মুক্ত-বাণিজ্যের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছি। এতে শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রও একই সুবিধা পাবে।’