তালিবানের কাবুল দখলের পর বাংলাদেশের জঙ্গিরা কি করছে? তারা কি নিস্ক্রিয়? নাকি তলে তলে সংগঠিত হচ্ছে? অনলাইনে তাদের তৎপরতাই বা কি? এ নিয়ে কৌতূহল আছে। উদ্বেগের খবর নেই।তবে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে এক ধরণের উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে যদিও বেশিরভাগ ইসলামি দলই তালিবান আদর্শে বিশ্বাসী নয়।
এসব নিয়ে কথা বলেছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। এই সংবাদদাতাকে তিনি বলেন, আমরা তাদের খোঁজ-খবর রাখছি। দেখছি, তারা কিছু করছে কি-না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি নানাদিক থেকে। তবে যেটুকু দেখছি তাতে বলা চলে, তারা নিস্ক্রিয়। চার- পাঁচজনের মিসিং-এর খবর পেয়েছি। এরমধ্যে তিনটি পরিবারের তরফে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এগুলো তদন্ত করে দেখছি আমরা। তিনি অবশ্য একথাও বলেন, বাড়ি থেকে বের হওয়া মানেই এমন নয় যে, তারা আফগানিস্তানের পথে পা বাড়িয়েছে। অনলাইনে তালিবানের সহযোগিতা করার আহ্বানে দু’-একজন সাড়া দিতেও পারে । জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন(জেএমবি) তালিবানকে সমর্থন দিয়েছে। ক্ষমতা দখলে অভিনন্দন জানিয়েছে।
আসাদুজ্জামান বলেন, তালিবানের দোহা অফিসের মুখপাত্র ড. মোহাম্মদ নাইম এটা নিশ্চিত করেছেন, তাদের সঙ্গে কোনো বিদেশি যোদ্ধা নেই। তাদের পক্ষ থেকে কোনো আহ্বানও নেই। এ কারণে বাংলাদেশে তালিবান সমর্থকরা অনেকটাই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালিবান আদর্শে বিশ্বাসীদের শুরুতে যেমন উচ্ছ্বাস ছিল এখন তা নেই। এদের সঙ্গে তালিবানের কোনো যোগাযোগও নেই। বাংলাদেশে জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আসাদুজ্জামান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যাকশনে এদের তৎপরতা অনেকটাই ধ্বংস হয়েছে। এ কারণে আমাদের সামনে এই মুহূর্তে কোনো হুমকি নেই। তবে এটা বলবো না, একদম জঙ্গি নির্মূল হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপাতত হয়তো কোনো হুমকি নেই। পরিশেষে কিছু হবে না তা একবাক্যে বলা যায় না। বাংলাদেশের তালিবান সমর্থকরা কিছু করার চেষ্টা করতে পারে এমন আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের বিশ্বাস, নতুন কোনো উগ্রপন্থী সংগঠিত হতে পারবে না। আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাংলাদেশ থেকে বহু সংখ্যক মানুষ আফগানিস্তানে গিয়েছিল। এদের অনেকেই প্রাণ হারায়। যারা বেঁচে গিয়েছিল তারা দেশে ফিরে জঙ্গি তৎপরতায় অংশ নেয়। সে সময় তারা শ্লোগান দিয়েছিল , ‘আমরা সবাই তালিবান, বাংলা হবে আফগান।’
এখন অবশ্য প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। তালিবান এখন নিজেরাই রাষ্ট্রক্ষমতায়। তারা কাউকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে না সমর্থনও দিচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মুনীরুজ্জামানের মতে, বাংলাদেশের জঙ্গি পরিস্থিতির সঙ্গে আফগানিস্তানের তালিবানের একটি সরাসরি সম্পৃক্ততা ও প্রভাব রয়েছে। এ কারণেই কাবুলে তালিবানের ক্ষমতা দখলের বিষয়টিকে উদ্বেগ ও শঙ্কার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।