আজ আপনাদের শোনাবো লি ইয়ং সু এর কথা যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যৌন দাস হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই যৌন দাসীদের ঐ সময় বলা হত কমফর্ট উইমেন। ঐ কমফর্ট উইমেনদের মধ্যে লি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ১৬ বছর বয়সে তাকে যৌন দাসি হতে বাধ্য করা হয়। তিনি তার বন্ধু বানসুনের সাথে শামুক ধরার জন্য নদীর ধারে গিয়েছিলেন, তখনই জাপান সেনাবাহিনীর এক সদস্য তাদের দু'জনকেই ধরে নিয়ে যায়। প্রথমে ট্রেনে এবং তারপর একটি নৌকায় করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তাইওয়ানের সিঞ্চু কাউন্টির কামিকাযে ইউনিটে। সেদিনই তাকে প্রথম ধর্ষণ করা হয়।
ঐ লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে অনেকবার শিউরে উঠেছেন, কেঁদেছেন। বলেন, তখন গড়ে দিনে চার থেকে পাঁচজন পুরুষের সঙ্গে তাকে যৌন সম্পর্কের জন্য জোর করা হত। তাকে বিশ্রামের কোন সুযোগ দেয়া হতো না। এমনকি ঋতুস্রাবের সময়ও কোন ছাড় দেয়া হয়নি। "বৈদ্যুতিক তার দিয়ে নির্যাতন করা হত। একবার এক সৈনিক তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিলো। অনেক নির্যাতন সহ্য করেছেন লি এবং পরবর্তীতে নির্যাতনের কথা মনে করে নিজেকে সোপে দিতেন ঐ হায়েনাদের হাতে। লি বলেন যে তিনি কখনোই পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবেননি কেননা তিনি জানতেন না পালিয়ে গেলেও কোন পথ দিয়ে ঐ অঞ্চল ছেড়ে যাবেন। তাকে অন্যান্য কমফর্ট উইমেনদের সঙ্গে রাখা হতনা। যুদ্ধের পর তিনি যখন তার বাড়িতে ফিরে যান তার পরিবার তাকে গ্রহন করেনি। এবং বিয়ে করা ঠিক হবেনা ভেবে আজীবন একাই রয়ে গেছেন।লি ঐ সময়টিতে বুঝতে পারেননি তার সাথে যা ঘটেছিল তা আরও অনেক মহিলার সঙ্গেও ঘটেছিলো।
লি এই বিষয়ে প্রথম ১৯৯২ সালে কমফর্ট উইমেন হিসাবে তার অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে এসেছিলেন। আরেকজন মহিলা যিনি জাপানি ইম্পেরিয়াল সেনাবাহিনীর যৌন দাসী হতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁর সাক্ষাৎকার টিভিতে দেখে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন উনত্রিশতম মহিলা যিনি সাক্ষ্য দেন। লি বলেন, তাঁর কাছে জীবনের কোন অর্থ ছিলোনা।নিজেকে তিনি মূল্যহীন মনে করতেন। কিন্তু বাকি ঐ মহিলারা তাকে নতুনভাবে নতুন রুপে বেঁচে থাকার কারণ দিয়েছেন।
২০০০ সালে টোকিও ও জাপানের সামরিক যৌন দাসত্ব সম্পর্কিত মহিলাদের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার সাথে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে তিনি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট স্মৃতি জাদুঘরে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
২০০৭-এ, তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার অভিজ্ঞতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, "আমি কোরিয়ার সম্মানিত কন্যা, আমি কোনও কমফর্ট ওমান নই।" জাপানী সেনাবাহিনীর হাতে তাঁর অভিজ্ঞতাকে "বেদনাদায়ক" বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। তার সাক্ষ্য দেওয়ার পর, জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ঐ ঘটনা্র জন্য জাপানের সেনাবাহিনী দায়ী নয় বলে দাবী করেন এবং মন্তব্য করেন যে ১৯৯৩ সালে জাপানের মন্ত্রিসভা থেকে ক্ষমা চাওয়া জরুরি ছিল না।লি এবং আরও দুজন কমফর্ট ওমান সাক্ষ্য দেয়ার কারণে জাপান সরকারকে ঐ মহিলাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলা হয়।
Your browser doesn’t support HTML5
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের সামরিক বাহিনী দ্বারা যৌন দাসত্বের শিকার দক্ষিণ কোরিয়ার লি ইয়ং সু এখন আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হতে চান এই বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য।
৯২ বছর বয়সী লি ইয়ং-সু আশা করছেন যে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত যারা বিরোধ নিষ্পত্তি করে থাকেন, তারা ৩০ বছর ধরে চলতে থাকা এই বিষয়টির নিষ্পত্তি করবে এবং জাপান সরকারকে তাদের দাসত্বে বাধ্য করার জন্য দায়ী করবে।
লি বলেন, "আমি যা করতে পেরেছিলাম সব করেছি। আমি আমার গল্পটি শেয়ার করেছি বিশ্বজুড়ে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিধি পরিষদের দ্বারস্থ হয়েছি, সান ফ্রান্সিসকোতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের কাজ করেছি। এমনকি বিচারেও অংশ নিয়েছি। তবুও জাপান অস্বীকার করে চলেছে। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে। জাপান বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।"
লির বার্তাটি স্পষ্ট। তিনি বলছেন, "এখন আর কোনও সময় বাকি নেই।" "আমার শেষ ইচ্ছা প্রেসিডেন্ট মুন জা-ইন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার একটি আন্তর্জাতিক আইনের রায় পাবে। যাতে করে আমি শান্তিতে পরপারে যেতে পারি।