দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর বিধিনিষেধের কারণে সেন্ট জর্জ ক্যাথেড্রালের ভিতরে মাত্র ১০০ জন শোকার্তকে ওই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বর্ণবাদ বিরোধী অবিসংবাদিত নায়ক এবং মানবাধিকার কর্মী টুটু দীর্ঘদিন প্রস্টেট ক্যান্সারে ভোগার পর, গত ২৬ ডিসেম্বর ৯০ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন।
ডেসমন্ড টুটু, ১৯৮৪ সালে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তার অভিযানের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। মারা যাবার আগে তিনি বলেছিলেন, তাঁকে যেন সস্তা কোনো কফিনে শোয়ানো হয় এবং তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ফুলের জন্য কোনও অর্থ যেন খরচ না করা হয়, সেই অর্থ তিনি ভাল কাজে দান করার অনুরোধ করেছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন, কেপটাউনে শনিবার তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে। সে সময় তাঁর বিধবা স্ত্রী, লিয়া টুটুকে একটি হুইলচেয়ারে বসে, তাঁর প্রখ্যাত স্বামীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর কথাগুলো শুনতে দেখা যায়।
ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি এক টেলিভিশন বার্তায় একটি হাতির প্রতি ইঁদুরের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, সারা বিশ্বের মানুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত বেশিরভাগ বার্তায় বলা হয়েছে, তাদের অন্ধকার পৃথিবীতে ডেসমন্ড টুটু আলোক বার্তা নিয়ে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, “তিনি কখনও ভবিষ্যদ্বাণী বলা বন্ধ করেননি, তিনি কখনও জোরালোভাবে কথা বলা বন্ধ করেননি, তিনি কখনও আলো ছড়ানো বন্ধ করেননি। অনেক নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর আলো সময়ের সাথে ম্লান হয়ে গেছে, কিন্তু তাঁর দীপ্তি ছিল চির উজ্জ্বল”।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা প্রশংসাসূচক ভাষণে বলেন, টুটু ফিলিস্তিনি এবং সমকামী সম্প্রদায়ের সদস্যদের পক্ষেও উচ্চকিত স্বরে কথা বলেছেন।
টুটুকে দক্ষিণ আফ্রিকার আধ্যাত্মিক পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রামাফোসা বলেন, দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে ধর্মগুরু আশা ও ক্ষমার বাণী প্রচার করেছিলেন।
টুটু ট্রুথ এন্ড রিকনসিয়ালেশন অর্থাত্ সত্য ও পুনর্মিলন কমিশনের সভাপতি ছিলেন যে কমিশন বর্ণবাদের নৃশংসতার শিকার এবং অপরাধীদের নিরাময় করতে চেয়েছিল।
তিনি "রেইনবো নেশন" শব্দটি তৈরি করেছিলেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী সমস্ত বর্ণের লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে এবং ঝড়ের পরে যে সৌন্দর্য আসতে পারে তার কথা উল্লেখ করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, দেশটিতে ব্যাপক অপরাধ ও দুর্নীতির কারণে, টুটু দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করেছিলেন।
রামাফোসা এর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, “এমন কিছু সময় ছিল, যখন তিনি হতাশা বোধ করেছিলেন, কিন্তু তবুও, তিনি কখনও আশা হারাননি। আমরা যেই হই না কেন যেখানেই থাকি না কেন, তাঁকে যেন আমরা সবচেয়ে উপযুক্ত শ্রদ্ধা জানাতে পারি, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সারা জীবন অক্লান্তভাবে প্রচার করে গেছেন। আর্চবিশপ টুটু যদিও একটি শক্তিশালী উত্তরাধিকার রেখে গেছেন, তবুও তাঁর প্রয়াণে আমাদের ক্ষতি অপূরণীয়”।
টুটুর কন্যা, রেভারেন্ড নাওমি টুটুও শোকাগ্রস্ত লোকেদের সম্বোধন করে বলেন, “আমরা যে বার্তা পেয়েছি তার বেশিরভাগই বলেছে, 'ওঁকে বিশ্বের সাথে সহভাগের জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।'