সম্প্রতি খবরে প্রকাশিত মিয়ানমারের দুই সৈন্য রোহিঙ্গা গণহত্যা বিষয়ে তাদের জবানবন্দী দিতে নেদারল্যান্ডসের দ্যা হেগে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পক্ষে যে সংস্থা কাজ করে থাকে ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর রোহিঙ্গার নির্বাহী পরিচালক সাইমন বিলিনেস এবং আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়নের মহাপরিচালক ও পেনসেলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ ওয়াকারউদ্দিন ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগকে এই সম্পর্কে তাদের মন্তব্য দিয়েছেন।
আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়নের মহাপরিচালক ও পেনসেলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ ওয়াকারউদ্দিন বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা কারণ আমরা গণহত্যা শুরু হতে দেখিনি। মিয়ানমারের দিক থেকে কোন সাক্ষী পাইনি আমরা। আমাদের কাছে সব প্রমাণ আছে যেহেতু সাক্ষীরা সবাই শরণার্থী। যখন আপনি আদালতে যাবেন, মামলার জন্য দুই দিকেরই সাক্ষ্য প্রয়োজন।এখন আমাদের কাছে মিয়ানমারের দিক থেকেও সাক্ষ্য রয়েছে।
এই সৈন্যরা মানবিকতার খাতিরে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে গেছে। আমি বিশ্বাস করি তারা মিথ্যা বলার জন্য সেখানে যায়নি। তারা ন্যায়বিচার চায়। আমরা সবাই ন্যায়বিচার চাই কারণ আমরা সবাই মানুষ।সুতরাং, আরো সৈন্য আসবে, আরো অফিসার আসবে, তারা মানবজাতির প্রতি যা করেছে সেই অপরাধবোধ তাদের তাড়া করবে। দিন যত এগিয়ে যাবে, অনেক কিছু উন্মোচিত হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর রোহিঙ্গার নির্বাহী পরিচালক সাইমন বিলেনেস বলেন, এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মামলাটি আরও শক্তিশালী করবে। এটি এই মামলার নিশ্চয়তা প্রদান করে যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত গণহত্যার আদেশ দিয়েছে। সুতরাং, এটি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরো একটি অভ্যন্তরীণ বিবরণ প্রদান করে। এবং গণহত্যার জন্য একটি মামলা নির্মাণের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনাকে গণহত্যার প্রমাণ দিতে হবে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য মামলাটিকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে ঐ সৈন্যদের জবানবন্দী। তাই, এই সাক্ষ্য, উদাহরণস্বরূপ কংগ্রেসে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য স্থানে ও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার জন্য ব্যবহার করা হবে।
ভয়েস অফ আমেরিকার রোহিঙ্গা বিভাগকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনের বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট টুন খিন বলেন, আমি মিয়ানমারের এই দুই তাতমাটাও (সামরিক) কর্মীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তাদের সাহসী পদক্ষেপের জন্য, যারা আরাকানে আদিবাসী রোহিঙ্গা নামে পরিচিত একদল মানুষের বিরুদ্ধে অমানবিক নৃশংসতা এবং গণহত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করতে চাই মিয়ানমারের উপর আরো চাপ প্রয়োগ করতে যাতে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের আরো প্রত্যক্ষদর্শীদের বের করে আনতে পারে, যাতে তারা দোষীদের শাস্তি দিতে পারে।
ভয়েস অফ আমেরিকার রোহিঙ্গা বিভাগকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতা ও আরাকান ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ সাদেক বলেন, আমি বলতে চাই যে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যেহেতু আমরা রোহিঙ্গা গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা ন্যায়বিচার দাবি করছি, তাই এটা আমাদের মামলাকে সাহায্য করবে যে মামলা বর্তমানে আইসিসি, আইসিজে এবং আর্জেন্টিনাতে চলছে। আমরা জানি এটা কেবল শুরু এবং আরও প্রমাণ বেরিয়ে আসবে। এই দুই সামরিক কর্মকর্তা আমাদের মামলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী এবং এ ধরনের সাক্ষীদের বিশেষ নিরাপত্তার বলয়ে রাখা প্রয়োজন। শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল মিং অং লেইন এবং অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তাদের উপর মনোযোগ দিতে হবে আমাদের, যারা ঘরবাড়ি পুড়িয়ে, ধর্ষণ এবং শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার আদেশ দিয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে এই দুই সাক্ষীর মাধ্যমে আরো সুযোগ সৃষ্টি হবে, আমরা আরো প্রমাণ পুনর্গঠন করতে পারবো এবং আমি বিশ্বাস করি যে ন্যাযবিচারের পথে রয়েছি আমরা। আমি যতদূর জানি আইসিসি প্রসিকিউটরের অফিস তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না যদি প্রমাণ না মেলে। সামরিক বাহিনীর বর্ণনা যাই হোক না কেন, আমি বিশ্বাস করি এই দুই সৈন্যের সাক্ষী হবে শক্তিশালী এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই বিচার ব্যবস্থার বিষয়গুলোকে সমর্থন করা, যার মধ্যে রয়েছে আইসিজে'র মামলা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে সমর্থন করা। আইনজীবীদের উচিত এই মামলার জন্য প্রস্তুত হওয়া।
Your browser doesn’t support HTML5