আমেরিকান স্বপ্ন রক্ষায় আরো চার বছর কাজ করার সুযোগ দিতে আমেরিকানদের প্রতি আহবান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের পক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতা গ্রহণ করলেন। ২৭শে আগষ্ট বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের সাউথ লনে প্রায় ১৫০০ মানুষের উপস্থিতিতে তিনি বক্তব্য রাখেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “এবারের এই নির্বাচনে নির্ধারিত হবে আমরা আমেরিকান স্বপ্ন রক্ষা করতে চাই, নাকি আমাদের গন্তব্যের পথকে সমাজতান্ত্রিক আদর্শবাদীদের হাতে তুলে দিয়ে ধ্বংস করতে চাই”।
২৪শে আগষ্ট রিপাবলিকান দলের সম্মেলন শুরু হয় নর্থ ক্যারোলাইনার শার্লটে। সম্মেলনের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত ট্রাম্প পরিবারের সদস্য, বিশেষ করে ফার্স্ট প্রেসিডেন্টের ছেলেমেয়েরা বক্তব্য রাখেন। কথা বলেন রিপাবলিকান দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
সমাপনী রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পরিচয় করান তাঁর কন্যা ইভাংকা ট্রাম্প। তিনি বলেন, “আজ রাতে আমি জনগনের প্রেসিডেন্টের কন্যা হিসাবে আপনাদের সামনে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিতে গর্বিত।
প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সামাজিক অস্থিরতা ও সংঘাত সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ওপর জোর দেন।
রিপাবলিকান সম্মেলনের বিভিন্ন পর্যয়ে দর্শকদেরকে মনে করিয়ে দেয়া হয় ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের কথা। সেন্ট লুইসের যে দম্পতি আন্দোলনকারীদের প্রতি বন্দুক তাক করেছিলেন, সেই প্যাট্রিশিয়া ম্যাকক্লোস্কি কথা বলেন সম্মেলনে,
তিনি বলেন “সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়েও তারা খুশী নয়; তারা শহর উপশহরগুলো ধ্বংস করতে চায়”।
জো বাইডেনকে ‘ট্রোজান হর্স’ আখ্যা দিয়ে বলেন প্রেসিডেন্ট বলেন তিনি ডেমোক্রটিক দলের বামপন্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “জো বাইডেন দুর্বল। তিনি সেইসব কপটচারীদের কথা শোনেন যারা তাদের শহরকে ধ্বংস করে পালিয়ে যায়”।
যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নে আরো চার বছর কাজ করার সুযোগ দিতে আমেরিকানদের প্রতি আহবান জানানোর মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের তৃতীয় দিন বুধবার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়োন গ্রহণ করছন মাইক পেন্স।
মাইক পেন্স বলেন, “আমার ওপর আস্থা রেখে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আমাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার জন্যে মনোনীত করেছেন, রিপাবলিকান দলের সমর্থন ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমি এতে কৃতজ্ঞ। আমি মনোনয়োন গ্রহণ করছি”।
মাইক পেন্স জো বাইডেনের সমালোচনা করে বলেন, “জো বাইডেন বলেছেন আমরা একটা অণ্ধকার সময়ে বাস করছি। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন জো বাইডেন যেখানে অন্ধকার দেখেন, আমরা দেখি আমেরিকানদের মহত্ব”।
রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় দলের সম্মেলনের বক্তারাই পরস্পরের ব্যাপক সমালোচনা করেন। দুই দলের বক্তারাই নির্বা্চনকে সামনে রেখে তাদের দলীয় নীতি ও পরিকল্পনার কথা কম উল্লেখ করেন।
রিপাবলিকান সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে ক্যানসাসের রিপাব্লিকান ডেলিগেট মাইক কুকলম্যানের বক্তব্যেও তা উঠে আসে।
“শুনেছি বাইডেন বা অন্যরা শুধু প্রেসিডেন্টের ওপর আক্রমন করে কথা বলেছেন। নির্বাচিত হলে তারা কি করবেন তা তেমন কিছু বলেন নি”।
ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর বিশ্লেষক উইলিয়াম হাওয়েল বলেন, “এটা রিপাবলিকান সম্মেলনে আরো স্পষ্টভাবে লক্ষ্যনীয়। প্রেসিডেন্ট পরিস্কার করে তাঁর পরিকল্পনার কথা বলেন নি। অর্থনীতির গতি ফেরানোর কথা অস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে; কিন্তু বিশদভাবে কিছু উল্লেখ করা হয়নি, কিভাবে তিনি তা করবেন কিংবা মহামারী নিয়ন্ত্রনের বিষয়ে স্পস্ট কিছু নেই”।
মহামারী নিয়ন্ত্রন নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। প্রেসিডেন্ট তার জবাব দিয়েছেন তিনি হোয়াইট হাউজে উপস্থিত ১৫০০ মানুষের সামনে, যাদের প্রায় সকলেরই মাস্ক পরা ছিল না এবং কাছাকাছি বসা ছিলেন। বেশিরভাগেরই কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাও ছিল না।
রিপাবলিকান কনভেনশনে ট্রাম্পের কড়া সমর্থকরা ছাড়াও তুলে ধরা হয়েছে দলে যাদের তার প্রতি সমর্থন দুর্বল তাদেরকেও। তুলে ধরা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্প্যানিকদেরকেও।
সম্মেলনের দ্বিতীয় রাতে ভারতীয় বংশোদ্ভুত এ্যামেরিকান ও জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিক্কি হেলির বক্তব্যে তার প্রতিফলন দেখা যায়:
“কৃষ্ণাঙ্গ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তারা সকলেই গুরুত্বপূর্ন। যেসব কৃষ্ণাঙ্গ শিশু প্লেগ্রাউন্ডে অস্ত্র সহিংসতার শিকার হয়েছে, সেটাও বিবেচনা করা হচ্ছে”।
সমাপনী দিন ২৭শে আগষ্ট দুপুরের পর থেকেই হোয়াইট হাউজের বাইরে বিভিন্ন স্থানে ট্রাম্প বারোধী প্রতিবাদকারীরা জড়ো হন। তারা পরিবর্তনের দাবীতে নানা স্লোগান দেন। হোয়াইট হাউজের উত্তর পাশে লাফায়াত পার্কের বাইরে জড়ো হওয়া প্রতিবাদকারীদের কয়েকজন বলেন তারা চান পরিবর্তন।
লিয়ানা নামের এক প্রতিবাদকারী বলেন, “আমরা দেখছি আমেরিকায় ফ্যাসিবাদ জেগে উঠছে। এটি অবমাননাকর ও পেছনপন্থী। সচেতন জনগন হিসাবে এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে”
ফ্রাইন স্কট নামের এই প্রতিবাদকারী বলেন, "আমি মনে কর ই এবারের নির্বাচন জো বাইডেনের পক্ষে যাবে। এই দেশের জন্যে এটা প্রয়োজন। নইলে দেশটি অন্যদিকে যাচ্ছে। ট্রাম্প আমাদেরকে নেতিবাচক দিকে নিয়ে চলছেন। এর পরিবর্তন দরকার”
প্রতিবাদকারীদেরকে শান্ত হবার আহবান জানিয়ে হোয়াইট হাউজের বাইরে এক পর্যায়ে দুজন রিপাবলিকান সমর্থক কাছে এলে দুই পক্ষের মধ্যে কিছু সময় ধরে বাক বিতন্ডা হয়। পুলিশ তাদেরকে শান্ত করেন।
রিপাবলিকান সমর্থক জেকব অল বলেন, “ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের নামে যে সন্ত্রা্সী দল এখানে হোয়াইট হাউসের সামনে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে তাদের থামাতে এসেছি। আজ রাতে ডনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনীত করার এই সম্মেলনে সকলের অংশ নেয়া উচিৎ”।
জ্যাক বার্কম্যান বলেন, “আমি মনে করছি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনে জিতবেন। এই সপ্তাহের নির্বাচনী জরিপে তাঁর অবস্থান অনেক ভালো”।
এবারের রিপাব্লিকান সম্মেলনের মূল বিষয়: ‘আমেরিকান বীরদের সম্মান জানানো। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দুই দলের জাতীয় সম্মেলন শেষ হয়ে গেলো। এখন শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারনা ও বিতর্ক। ৩রা নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষন গনণা শুরু হয়েছে। নির্বাচনের দিন যতো এগিয়ে আসছে, আমেরিকানরা প্রস্তুত হচ্ছেন।