সরকারি তথ্য অনুযায়ী ঝিনাইদহে প্রতি বছর গড়ে চার শতাধিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। আত্মহত্যাকারীদের বেশির ভাগই কম বয়সী তরুণ, তরুণী এবং নারী। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মাঝে এই প্রবণতা বেশি। ঝিনাইদহের পর এবার আরেকটি জেলা জয়পুরহাটেও আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে। দেশে আত্মহত্যা চেষ্টাকারীদের সংখ্যাও এই দুই জেলার বেড়েছে। করোনাকালে আত্মহত্যা চেষ্টাকারীদের সংখ্যা শুধু দুই জেলা নয়, অন্য শহরগুলোতেও বেড়েছে। নারীর তুলনায় পুরুষের আত্মহত্যার সংখ্যা এখন বেশি। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন এর বড় কারণ হতে পারে দারিদ্র এবং বেকারত্ব।
২০২০ সালে ঝিনাইদহে আত্মহত্যাকারীদের ৪৭ শতাংশই পুরুষ। ২০২০ সালে ৩২০ জন আত্মহত্যা করেন। পুরুষ আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা ১৫১, নারী ১৬৯ জন। আগের বছরগুলোর তুলনায় যার গড় সংখ্যা বেশি। গড় পুরুষ আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা এই জেলাতে ছিল ৩৬ থেকে ৪৪ শতাংশের মধ্যে। ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঝিনাইদহে ৩১৫২ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে। একই সময়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ২২ হাজার ৬৭ জন। গত দুই বছরেও ঝিনাইদহে আত্মহত্যার পরিমাণ কমেনি। সোসাইটি ফর ভলান্টারি অ্যাকটিভিটিজ সোভা নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আত্মহত্যা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে। তারা ঝিনাইদহকে আত্মহত্যার দিক থেকে লাল তালিকাতে রেখেছে। একই তালিকায় এসেছে জয়পুরহাটের নাম। করোনাকালে এই জেলাতে আত্মহত্যা বেড়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী জয়পুরহাটে গত ৮ মাসে ৭১ জন আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৯ সালে পুরো বছরে ছিল ৭৭ জন। আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের সংখ্যা জয়পুরহাটেও বেড়েছে।
বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে আজ আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালনকালে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। এবার আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করো’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আত্মহত্যার প্রবণতার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে।বছর অনুযায়ী হিসাব করে দেখা গেছে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। বয়স হিসাবে দেখা গেছে, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা বেশি আত্মহত্যা করে।সাম্প্রতিক সময়ে শিশুদের মাঝেও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জয়পুরহাটে বেশ কিছু শিশুর আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশে কেন এত আত্মহত্যা? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেছেন, সামাজিক বৈষম্য, অস্থিরতা, পারিবারিক নির্যাতন, কলহ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, মাদক, দরিদ্রতা, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন কারণেই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। একই ধরনের অভিমত রেখে অন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারের প্রতি সবাইকে আরও যত্নশীল হতে হবে। সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। মাদক অনেক বেশি ক্ষতি করছে তরুণদের। সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে। কর্মহারা মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।