সিরিয়ার নতুন বিরোধী জোট কার্যকর ভুমিকা পালন করবে : মাইকেল রায়ান

সিরিয়ায়, বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক এবং কাতারের কর্মকর্তাদের চাপে , বিরোধী গোষ্ঠিগুলো প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করার জন্যে একটি বৃহত্তর জোট গঠন করেছেন , একজন মধ্যপন্থি মুসলমান ধর্মীয় নেতা আহমেদ মা’আস আল খাতিবের নের্তৃত্বে । তাঁরা চেষ্টা করছেন যে এই নতুন জোটকে সবাই স্বীকৃতি দিন যাতে করে একসময়ে এরা প্রবাসী সরকার গঠন করতে পারে। এ প্রসঙ্গেই ওয়াশিংটনে মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের স্কলার এবং জেইমস টাউন ফাউন্ডেশানের সিনিয়ার ফেলো মাইকেল রায়ানের কাছে জানতে চাইছিলাম যে এই নতুন একতাবদ্ধ বিরোধ জোট গঠনের কারণে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অপসারণ হওয়ার ব্যাপারে তিনি কতটা আশাবাদী ?

ড রায়ান বলেন যে তিনি নিজেকে আশাবাদী দাবি না করেও বেশি আশাবাদি অন্তত এ ব্যাপারে যে আগেকার সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলের বদলে এখন যে সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশন গঠিত হয়েছে সেটা বেশ ভিন্ন। ভিন্ন এ কারণে যে মনে হচ্ছে এই জোটটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের পথে রয়েছে , সিরীয় জনগণের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠি হিসেবে। তিনি বলেন যে এই জোটটি সিরিয়ার ভেতরে যে বিরোধী শক্তি সক্রিয় আছে তাদের অর্থায়ন ও বৈধতার জন্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে।

ড মাইকেল রায়ানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে বিরোধী জোটের যে নের্তৃত্ব দিচ্ছেন আহমেদ মা’আস আল খতিব , যিনি একজন মধ্যপন্থি মুসলমান ধর্মীয় নেতা এবং তিন মাস আগে সিরীয় সরকার থেকে বেরিয়ে এসছ্নে ,প্রবাসী সরকার গঠিত হলে তাঁর সেই সরকার প্রধান হবার সম্ভাবনা ও রয়েছে । সে ক্ষেত্রে তিনি আল ক্বায়দা এবং অন্যান্য উগ্রপন্থি দলগুলোকে কি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কারণ অভিযোগ হচ্ছে যে এরা আসাদ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে মিশে গেছে ?

Your browser doesn’t support HTML5

ড মাইকেল রায়ানের সাক্ষাতকার



তাঁর জবাব ছিল যে এই নতুন জাতীয় জোটের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হচ্ছে যে এই জোটটি প্রধানত এই কারণে গঠিত হয় যে যুক্তরাষ্ট্র , ব্রিটেন ফ্রান্স এবং ফ্রেন্ডস অফ সিরিয়ার অন্যান্য দেশগুলি জানতে চাইছিল সুনির্দিষ্ট ভাবে যে তারা কাদের নিয়ে কাজ করছে। এই ব্যক্তির সঙ্গে রয়েছেন তাঁর অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিয়াদ সাইফ । তা ছাড়া তাঁর দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন সুহেইর আল আতাসি , যিনি একজন মহিলা এবং এদের উভয়কেই সিরিয়ার ভেতরে সবাই চেনে। এটা ও গুরুত্বপুর্ণ কথা যে আহমেদ মা’আস আল খতিব , ঐতিহাসিক উমাইয়াদ মসজিদের ইমাম ছিলেন , যেটি উমায়াদ আমলে নির্মিত হয়। তাঁর বাবাও ইমাম ছিলেন । সুতরাং তিনি দামেস্কের সুপরিচিত পরিবার থেকে এসছেন। তা ছাড়া সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ তাকে কয়েক বার গ্রেপ্তার করার পর , ছাড়া পেয়ে তিনি সিরিয়া থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তিনি গেলেন মিশরের কায়রোতে , তিনি কাতার কিংবা সৌদী আরবে যাননি। ড রায়নি মনে করেন যে এটা প্রতীকি ব্যাপার । অন্তত কায়রো সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ব্যাপারটাও এখানে লক্ষ্য করার বিষয় । সেখানে এখন মুসলিম ব্রাদারহুডের নের্তৃত্বাধীন সরকার রয়েছে , যারা আল ক্বায়দার প্রধান বিরোধী পক্ষ। লোকজন আসলে অনেক সময়ে ভুলধারণা পোষণ করে , মনে করে ব্রাদারহুড উগ্রপন্থিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিন্তু আসলে তারা আল ক্বায়দার বৈরী পক্ষ। কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে পরবর্তী পদক্ষেপ হয়ত হবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ । ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তাদেরকে বৈধতা দেবার কথা ভাবছেন। তারা এই জোটের প্রতি তাদের সমর্থন জ্ঞাপন করেছে , যদিও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি এখনও। মূলত এই বৈধতা।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে গোটা আরব বসন্তের কারণে যুক্তরাষ্ষ্ট্রের সামনে কঠিন বিকল্প হিসেবে থাকছে স্বৈরশাসন কিংবা উগ্রবাদ। আর সে কারণেই কি বাশার আল আসাদের এত বিরোধীতা সত্বেও যুক্তরাষ্ট্র আসাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে চাইছে না ? ড মাইকেল রায়ান মনে করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যাপারটাকে সহজ ভাবে দেখা যায় কিংবা আরও জটিল ভাবেও দেখা যায়। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে বলা যায় অনেক গভীর ভাবে সম্পৃক্ত। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটি ছিল অন্যতম কঠিন পরিস্থিতি । তারা জানতো না কার সঙ্গে তারা কাজ করবে। সুতরাং ঠিক অজানা কারও সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। সুতরাং এই নতুন জোট যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এখন এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে। আরব লীগ এবং পশ্চিমের সমর্থন তারা যে ভাবে পাচ্ছে অনুমান করা যায় সেই পথ ধরেই এই জোটের প্রতি বৈধ এবং আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও আসবে।