আফগানিস্তান পরিস্থিতির প্রভাব ভারতের ঘরোয়া রাজনীতিতে: মোদিকে প্রশ্ন রাহুলের

আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া ভারতীয় নাগরিক

রবিবার ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ উদ্ধারকারী বিমানে যে ১৬৮ জনকে উড়িয়ে আনা হয়েছে তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন দুই আফগান সাংসদ। তাঁরা দুজনেই আফগান-শিখ। তাঁদের এক জন হলেন আনারকোলি হোনারইয়ার, অন্যজন হলেন নরেন্দ্র সিং খালসা। তাঁরা এজন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভারত সরকারকে।

আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কমবেশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলই তাদের উদ্বেগের কথা আগে জানিয়েছে। তবে এ বার কাবুল নিয়েও জাতীয় স্তরের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তানে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরানো এবং আফগান-হিন্দু ও আফগান-শিখদের ভারতে আশ্রয় দেওয়াকে যেমন রাজনৈতিক বিষয় করে তুলতে চাইছে সরকার শিবির, তেমনই সরকারের কৌশলগত অবস্থান জানতে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা।

সোমবার দুপুরে সরকার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে দেশের রাজনৈতিক দলগুলিকে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখা করবে বিদেশ মন্ত্রক। টুইট করে বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রী বিদেশ মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছেন, আফগানিস্তানের চলতি পরিস্থিতি সংসদের সমস্ত রাজনৈতিক দলকে জানাতে। এ ব্যাপারে সমন্বয়ের কাজ করবেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী।”

বিদেশ মন্ত্রী এ কথা জানাতেই সাবেক জাতীয় দল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলবেন না কেন? নাকি আফগানিস্তানে কী চলছে তা নিয়ে তাঁর কোনও ধারণাই নেই?”

আফগানিস্তানে আটকে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফেরানোর কাজ পুরোদমে চালাচ্ছে নয়াদিল্লি। রবিবারও একটি সি-সেভেন্টিন বিমান কাবুল থেকে দিল্লিতে এসে পৌঁছেছে। তাতে ১৬৮ জন ভারতীয় ছিলেন। এ ছাড়াও দোহা ও কাজাকস্তানের দুশানবে হয়ে কিছু ভারতীয় দেশে ফিরেছেন। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, রোজ কাবুল থেকে দুটি বিমানে করে ভারতীয়দের দেশে ফেরানো হবে।

আফগানিস্তানে তালিবানদের পুনরায় উত্থানের পর এখনও পর্যন্ত কোনও ভারতীয় হতাহতের খবর নেই। প্রাথমিক ভাবে ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটাই কমেছে। কারণ, ইতিমধ্যে বহু ভারতীয় দেশে ফিরে আসতে পেরেছেন। দেখা যাচ্ছে, সেই ‘সাফল্য’ রাজনৈতির ভাবে ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছেন মোদী সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা।

আফগান সঙ্কটের প্রসঙ্গ তুলে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) পক্ষে সওয়াল করেছেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী। তালিবানের দখলে চলে যাওয়া আফগানিস্তান থেকে বিপন্ন হিন্দু, শিখদের বিমানবাহিনীর বিমানে উদ্ধার করে নিয়ে আসার উল্লেখ করে নয়াদিল্লিতে পুরী বলেছেন, এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সিএএ চালু করা কতটা প্রয়োজন। তা ছাড়া হরদীপ পুরী টুইট করে লিখেছেন, “আমাদের অশান্ত পড়শি এলাকার সাম্প্রতিক যে ঘটনাবলী দেখা যাচ্ছে এবং শিখ, হিন্দুদের যে বিপন্ন সময়ের মধ্যে পড়তে হচ্ছে, তা থেকেই স্পষ্ট সিএএ কার্যকর করা কেন প্রয়োজন হয়ে উঠেছে”।

প্রসঙ্গত, রবিবার ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ উদ্ধারকারী বিমানে যে ১৬৮ জনকে উড়িয়ে আনা হয়েছে তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন দুই আফগান সাংসদ। তাঁরা দুজনেই আফগান-শিখ। তাঁদের এক জন হলেন আনারকোলি হোনারইয়ার, অন্যজন হলেন নরেন্দ্র সিং খালসা। তাঁরা এজন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভারত সরকারকে। তারপর বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীর পোস্ট করা ট্যুইটে বিমানের ভিতরে যাত্রীদের ‘ভারত মাতা কী জয়’ ধ্বনি দিতে দেখা গিয়েছে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্য ও বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের টুইটে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছে কংগ্রেস। লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেছেন, “এই উদ্ধারকাজ নিয়েও এখন মোদী সরকার রাজনীতি করতে চাইছে। দেখাতে চাইছে, তারা কতটা সফল। তা ছাড়া নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের কথা উল্লেখ করে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করতে চাইছেন সরকার ও বিজেপির নেতারা”। অধীরবাবুর কথায়, “আসল বিষয় হল, তালিবানদের উত্থানের কারণে উপ মহাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে কী ধরণের প্রভাব পড়তে পারে তা স্পষ্ট করেনি নয়াদিল্লি। প্রধানমন্ত্রীর উচিত তা বিরোধীদের জানানো এবং তা নিয়ে আলোচনা করা।”