শান্তিনিকেতনে আজ পৌষ মেলা প্রাঙ্গনকে পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ আঞ্চলিক বাসিন্দারা তুলকালাম চালিয়েছেন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবারে আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তা ছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের আপত্তি তো আছেই। তাই এবছর পৌষ মেলা হবে না এবং আগামী বছর দোলের সময় বসন্তোৎসব হবে না। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তখন থেকেই কিছু-না-কিছু বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, পরিবেশ আদালত বারবার বলছে পৌষ মেলা তিন দিনের বেশি করা যাবে না, তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা মেলা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আরও অনেক দিন। এতে মেলা প্রাঙ্গন দূষিত হচ্ছে। এই নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের রীতিমতো ঝামেলা হয়েছিল। আর এ বার মেলা প্রাঙ্গণ পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলার সিদ্ধান্ত জানার পর থেকেই শান্তিনিকেতনের পুরনো আশ্রমিকরা দল বেঁধে নেমে পড়েছেন এর প্রতিবাদে। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, বোলপুর থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এবং রাজনৈতিক নেতারা। শনিবার থেকেই ওখানে পাঁচিল দেওয়ার জন্য থাম বসানোর কাজ শুরু হয়, ইট-বালি আনা হয়। কিন্তু বাসিন্দাদের বাধা দানে সেই কাজ শুরু করা যায়নি। গতকাল রবিবার উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আশ্রমের নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ শুরু করান। কিছু ঠিকাদার বাসিন্দাদের হাতে মার খেয়েছেন বলে অভিযোগ। আজ সোমবার সকাল থেকেই ওখানে কয়েকশো বিক্ষোভকারী জমা হন। তাঁরা পণ করেছেন পাঁচিল হতে দেবেন না।বিক্ষোভকারীরা বলেন, রবীন্দ্রনাথ সবদিক উন্মুক্ত করে দিতে চেয়েছিলেন, আর বর্তমান কর্তৃপক্ষ ঠিক তার বিপরীত দিকে চলেছেন। তাঁরা সবকিছু বন্ধ করে দিতে চাইছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও প্রবল বিক্ষোভ দেখান।
এরপর কোনখান থেকে বুলডোজার আর পেলোডার এনে গর্ত বুজিয়ে দেওয়া হয় এবং বিশ্বভারতীর একটি গেট ভেঙে ফেলা হয়। এই নিয়ে পুলিশে ডায়েরি করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকার অভিযোগ করেন, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব পেছন থেকে ওখানে গন্ডগোল পাকানোতে উৎসাহ দিচ্ছেন। তাঁদের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া ওখানে পেলোডার নিয়ে আসা সম্ভব ছিল না। এর ফলে শান্তিনিকেতনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চান। পরে রাজ্যপাল জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন যে কাউকে গন্ডগোল করতে দেওয়া হবে না।
Your browser doesn’t support HTML5