ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে সরকারি মালিকানাধীন জমিতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের উচ্ছেদ অভিযান, রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছে স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা।
সেপ্টেম্বরে আসামের দারাং জেলার ধলপুর থেকে ৮০০ প্রধানত মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ অভিযান চলাকালীন সহিংসতায় দু’জন নিহত হওয়ার পর, এই খবর জাতীয় পর্যায়ে সবার নজরে আসে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও চিত্রে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসা এক যুবককে পুলিশ গুলি করছে -- এমন দৃশ্য জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছিলেন ওই যুবক। কয়েক সেকেন্ড পরে, ভিডিওতে দেখা যায় যে, তার নিথর দেহটি মাটিতে পড়ে আছে এবং একজন সরকার-নিযুক্ত ফটোগ্রাফার তার শরীরে লাথি মারছেন। মনিনুল হক নামে ওই যুবক এবং সহিংসতায় ধরা পড়া ১২ বছরের অপর এক শিশু পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, নদী ভাঙ্গনে তাদের নিজস্ব জমি হারিয়ে, ওই এলাকায় চলে আসার পর তারা সেখানেই কয়েক দশক ধরে চাষাবাদ করে আসছেন।
আসামে ক্ষমতাসীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি সরকার এই মাসে উচ্ছেদ অভিযান পুনরায় শুরু করেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মার সরকার, সরকারী জমিতে বসতি স্থাপন করা লোকদের উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
৫০০’রও বেশি পরিবার, যারা আদা এবং হলুদের মতো ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করতো, তাদের গত সপ্তাহে লুমডিং থেকে উচ্ছেদ করা হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, শান্তিপূর্ণ ওই অভিযানে শত শত পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
প্রধানত মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেই সরকারী জমি সাফ করার প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে সমালোচক এবং মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করেন।
তবে সরকার ওই অভিযোগ অস্বীকার ক’রে বলছে: উচ্ছেদ অভিযান কোনও সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে নয়, বরং বন ও সরকারি জমি দখল করে থাকা লোকজনকে লক্ষ্য করে। তাদের উচ্ছেদ ক’রে ওই জমি কৃষি প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা হবে, যেখানে "আদিবাসী" লোকেদের জন্য চাকরির সুযোগ নিশ্চিত হবে।