কোভিড মহামারীর ধ্বংসাত্মক দ্বিতীয় আক্রমণে ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবা বিপর্যস্ত

চিকিৎসকরা বলছেন যে, কোভিড মহামারীর দ্বিতীয় আক্রমণ ভারতের জন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এক জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করেছে, এবং ভারতের হাসপাতালগুলি খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, হাসপাতালগুলিতে রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শয্যা, অক্সিজেন এবং কোভিড-১৯ চিকিৎসার মূল ওষুধগুলিরও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে কোভিড-১৯ মহামারীর ধ্বংসাত্মক দ্বিতীয় আক্রমণ দেশের বৃহত্তম শহরগুলিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একেবারে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ভারতে প্রচুর পরিমাণে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে সুপার স্প্রেডার ইভেন্ট অর্থাৎ কভিড-১৯’এর সংক্রামক রূপগুলি দ্রুত ছড়িয়ে পড়া। এ বিষয়ে দিল্লি থেকে ভিওএর সংবাদদাতা অঞ্জনা পাসরিচার প্রতিবেদন থেকে জয়তী দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন যে, বিশ্বব্যাপী মহামারীর কেন্দ্রস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন ভারতবর্ষ।

নয়াদিল্লির একটি হাসপাতালে বিছানা ভাগ করে ভর্তি করা হয়েছে অনেক রোগীদের। ভারতের বিভিন্ন বিধ্বস্ত শহরগুলিতে মানুষেরা হয় তাদের প্রিয়জনদের হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য শয্যার সন্ধান করছেন অথবা দেহ দাহ করার জন্য শ্মশানে গিয়ে জড়ো হচ্ছেন। সুতরাং বেশির ভাগ ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে হাসপাতালে এবং শ্মশানে। দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের মতো শহরগুলিতে যেখানে হাসপাতালগুলি সমস্ত রকম সর্বাধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত, সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই সব হাসপাতালগুলিতেও স্বাস্থ্যসেবা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে।

মুম্বাই লীলাবতী হাসপাতালের, ফুসফুস-সংক্রান্ত চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতা জলিল পার্কার বলেন,"কোভিড-১৯ রোগীদের প্রবাহ এত বেশি যে আমাদের হুইলচেয়ারেই চিকিৎসা করতে হচ্ছে, কখনও কখনও আবার অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে থাকা অবস্থাতেই চিকিৎসা করতে হচ্ছে।" হাসপাতালগুলিতে রোগীদের শয্যা, চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন এবং ওষুধের স্বল্পতা যে কী মারাত্বক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে তার উদাহরণ স্বরুপ, এই ঘটনা আমাদের জরুরি জনস্বাস্থ্য সেবা ক্ষেত্রের সবচেয়ে খারাপ ঘটনা হিসেবে আমাদের স্মৃতিতে থেকে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতে কোভিড-১৯’এর এই দ্বিতীয় আক্রমণকে একটি "ঝড়" বলে অভিহিত করেছেন।তিনি বলেন, “করোনার সংকট দেশজুড়ে অক্সিজেনের ব্যাপক চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এটি খুব দ্রুত সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি”। যে সব পরিবার ইতিমধ্যে মৃত আত্মীয়দের জন্য শোক পালন করছেন, তাদের জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। আহমেদাবাদের বাসিন্দা দামোদর সিন্ধে বলেন, "আমি রাতে আমার স্ত্রীকে এখানে এনেছিলাম এবং সে ভাল ছিল এবং আমার সাথে কথা বলছিল। রাত প্রায দুটোর সময়, সে আমাকে জানায় যে, সে আর অক্সিজেন পাচ্ছে না এবং হাসপাতাল তাকে আর সরবরাহ করছে না"। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে বড় বড় হিন্দু ধর্মীয় উৎসব এবং শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক সমাবেশগুলি করার অনুমতি দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, কোভিড-১৯ আরও সংক্রামক প্রজাতিগুলি এই মারাত্মক সংক্রমণ বৃদ্ধি্র কারণ।

অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক গৌতম মেনন বলেন, "এটা সবাই জানে যে, কোভিড-১৯ ক্ষেত্রে এই নতুন প্রজাতিটি আরও সংক্রমণযোগ্য, মানুষের মধ্যে আরও সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়াও এড়াতে সক্ষম হয়।" কভিড মহামারীর দ্বিতীয় আক্রমণ, খুব দ্রুত ভারতকে বিশ্বব্যাপী মহামারির কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছে। গৌতম মেনন আরও বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে যখন কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমাদের টিকাদান কর্মসূচিটি কিছুটা কমে গেছে, এই সমস্ত কিছু প্রমাণ করছে যে, আগামী কয়েক সপ্তাহ ভারতের পক্ষে ভাল হবে না অর্থাৎ অশুভ বার্তা বয়ে আনবে"।

ভারতের জন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কোভিড-১৯’এর মোকাবিলা করতে করতে সবদিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, সুতরাং আগামী দিনগুলিতে এটি আরও বৃহৎ সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। ফুসফুস-সংক্রান্ত চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতা জলিল পার্কার আরও বলেন, “আমি মনে করি আমরা একেবারে বিধস্ত এবং শেষ হয়ে গিয়েছি। আমরা জানি না কীভাবে আমরা এই অবস্থা থেকে পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠব। আসুন আমরা সবাইকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করি, আসুন আমরা জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করি। ব্যবস্থা করি হাসপাতালগুলিতে রোগীদের জন্য আরও অনেক শয্যার, চিকিৎসার জন্য আরও অনেক অক্সিজেনের”।

কোভিড-১৯’এর দ্বিতীয় আক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য কর্তৃপক্ষে কেন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়নি, এমন প্রশ্ন নিয়ে মানুষ এখন হাহাকার করছে।

Your browser doesn’t support HTML5

অঞ্জনা পাসরিচার প্রতিবেদনটি পড়ে শোনাচ্ছেন জয়তী দাশগুপ্ত