পতঞ্জলি আয়ুর্বেদিক সংস্থার করোনা ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে ভারত সরকার

ভারতীয় যোগগুরু রামদেব গতকাল হঠাৎই এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে চাঞ্চল্যকর ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁর পতঞ্জলি আয়ুর্বেদিক সংস্থা সম্পূর্ণ দেশি পদ্ধতিতে করোনার ওষুধ বানিয়ে ফেলেছে। করোনা রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা ওই ওষুধ খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে রোগ মুক্ত হবেন এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই ওষুধ বাজারে আসবে বলেও তিনি দাবি করেন। রামদেব বলেন, করোনিল ও স্বসারি নামের ওই দুটি ওষুধ সহ একটি করোনা কিটের দাম পড়বে ৫৪৫ টাকা। আর সপ্তাহখানেকের অপেক্ষা। তার পরেই বাজারে সেটি এসে যাবে। রামদেবের এই ঘোষণা প্রত্যেকটি খবরের চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সরকারের টনক নড়ে। উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার, যেখানে রামদেবের পতঞ্জলি আয়ুর্বেদিক লিমিটেড সংস্থার সদর দপ্তর ও কারখানা, সেই রাজ্যের সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার একযোগে রামদেবকে নোটিস পাঠিয়ে বলে, এই ওষুধের গুণাগুণ বিচার না করে, সরকারিভাবে এর লাইসেন্স না নিয়ে কী ভাবে রামদেব এই ঘোষণাটি করে দিলেন! এখনই এই দুটি ওষুধ যার নাম দেওয়া হয়েছে করোনিল ও স্বসারি, এই ওষুধ দুটি কী কী দিয়ে বানানো হয়েছে, কোথা থেকে সেই অনুপান জোগাড় করা হয়েছে, কোথায় তৈরি হয়েছে, কাদের উপর পরীক্ষা করা হয়েছে ইত্যাদি সব রকম তথ্য আয়ুষ মন্ত্রকে পাঠাতে হবে। আয়ুষ হল ভারত সরকারের একটি মন্ত্রক যেটি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সঙ্গে সমান্তরালভাবে কাজ করে, কিন্তু এ দেশে

ভারতীয় যে সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, যেমন আয়ুর্বেদিক, যোগ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা, ইউনানী, হেকিমি, কবিরাজি ও হোমিওপ্যাথি, এইসব চিকিৎসার ওষুধপত্র এবং চিকিৎসকদের লাইসেন্স সবই আয়ুষ মন্ত্রকের হাত দিয়ে যায়। কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক আজ অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন যে, বাবা রামদেব করোনার একটি ওষুধ তৈরি করেছেন ভালো কথা‌। যেখানে সারা পৃথিবী এই ওষুধ বার করার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে, প্রতিটি দেশের বৈজ্ঞানিকরা এই ওষুধ তৈরিতে প্রাণপাত করে চলেছেন, সেখানে ভারতের একটি আয়ুর্বেদ সংস্থা হঠাৎ এই ওষুধ তৈরি করে ফেলল! তার আগে তো কিছু জানাতে হবে, এইভাবে তো হয় না। আয়ুষ মন্ত্রককে না জানিয়ে এই ওষুধের বিজ্ঞাপন দেওয়া এই ওষুধের প্রচার করা কোন কিছুই চলবে না। সরকারি নোটিস পাওয়ার পর গতকাল যদিও রামদেবের পতঞ্জলি সংস্থা সরকারের কাছে যা কিছু তারা চেয়েছে সেইসব লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছে, কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই একটা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। পতঞ্জলির কর্ণধার বাবা রামদেব সাংবাদিকদের বলেছেন, করোনার ওষুধ তৈরির কাজে সাহায্য করেছে রাজস্থানের জয়পুরের একটি ব্যক্তিগত মালিকানার বিশ্ববিদ্যালয়। দিল্লি, আহমেদাবাদ ও আরও কয়েকটি শহরের ২৮০ জন করোনা রোগীর ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। ওষুধ খাওয়ার তিন দিনের মধ্যে তাঁরা ৬৯% ভালো হয়ে যান। আর সাত দিন ওষুধ খেয়ে তাঁরা শতকরা একশো ভাগ সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে রামদেবের এই পতঞ্জলি সংস্থা ভারতীয় আয়ুর্বেদ প্রথায় খাঁটি পদ্ধতিতে ওষুধ তৈরি করে বলে দাবি করে থাকে এবং তা প্রচারও করে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদের বিশাল কারখানা উদ্বোধন করেছেন। ভারতীয় জনতা পার্টিতে রামদেবের বিপুল প্রভাব রয়েছে। হিন্দুত্ববাদীদের মদতপুষ্ট এই সংস্থা কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করছে এবং সারা ভারতে কয়েকশো কোটি মানুষ এই পতঞ্জলি সংস্থায় তৈরি ওষুধ বা অন্যান্য জিনিসপত্র, যেমন ঘি, মধু, ইত্যাদি নির্দ্বিধায় কিনছেন এবং ব্যবহার করছেন। কিন্তু ওষুধের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে করোনার মতো একটা সাংঘাতিক রোগের ওষুধ এইভাবে বিজ্ঞাপন করা বা বিক্রি করা অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং বিপজ্জনক। এটা সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আস্থার প্রবণতা সৃষ্টি করে। সুতরাং এটার গুণাগুণ ভালো ভাবে যাচাই না করে বাজারে এই নিয়ে কোনও প্রচার বা বিক্রি কিছুই করা যাবে না।

Your browser doesn’t support HTML5

পতঞ্জলি আয়ুর্বেদিক সংস্থার করোনা ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে ভারত সরকার