ভারত-চীন বিরোধ অব্যাহত থাকলেও অর্থনৈতিক সম্পর্কে উন্নতির আশা

ভারত ও চীন উভয় দেশের মধ্যে নয় মাস ধরে দীর্ঘ স্থবিরতা বিরাজ করছিল। বর্তমানে ভারতীয় ও চীনা সেনারা বিতর্কিত সীমান্ত থেকে সরে এসেছে, তবে বিরোধগুলি দীর্ঘায়িত হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ অত সহজ হবে না। তবে এশিয়ার দুটি বৃহৎ দেশের অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অঞ্জনা পাসরিচা তার এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছেন যে, চীনা ও ভারতীয় কামান, বন্দুক এবং ট্যাঙ্কগুলি ওই জায়গা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং সৈন্যরা হিমালয়ের পাদদেশ সীমান্তের প্যাংগং হ্রদের তীর থেকে পিছু হটেছে। এই অঞ্চলটিতে চীন কৌশলগত ভাবে হিমালয়ে তাদের সীমানা বিস্তৃত করে্ছে।

সৈন্য প্রত্যাহারের উপর প্রকাশিত একটি ভিডিওতে, ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে যে, এই অঞ্চলে চীনাদের দ্বারা নির্মিত অস্থায়ী কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভারতের লাদাখ অঞ্চলের সবচেয়ে সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে নয় মাস ধরে চলতে থাকা এই বিরোধের পরে সেখান থেকে সরে আসার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে এটি কেবল একটি শুরু।

দিল্লীতে অবস্থিত চীন বিষয়ক বিশ্লেষণ ও কৌশল কেন্দ্র থেকে জয়দেব রানাদে বলেন, “এটি প্রথম এবং একটি অস্থায়ী পদক্ষেপ। তবে হ্যাঁ, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হল প্যাংগং হ্রদের আশেপাশে যে উত্তেজনা রয়েছে সেটা কমানো”।ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই মাসের গোড়ার দিকে সংসদে বলেছিলেন যে, Line of Actual Control অথবা আসল নিয়ন্ত্রণ রেখা বা এলএসি হিসাবে পরিচিত সীমান্তে বিরোধ কিন্তু এখনও অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, এলএসিতে সেনা মোতায়েন ও টহল দেওয়ার বিষয়ে এখনও কিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। আমরা আমাদের পরবর্তী আলোচনায় এগুলিতে মনোনিবেশ করব।”

লাদাখের সীমান্তে আরও তিনটি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে ভারতে চীনের প্রতি ক্রমবর্ধমান সন্দেহের মধ্যে হিমালয় অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে, ভারত চীনকে সীমান্তে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। চীন বিষয়ক বিশ্লেষণ ও কৌশল কেন্দ্র থেকে জয়দেব রানাদে আরও বলেন, “মূল বিষয়টি হ'ল চীনাদের উদ্দেশ্য কী ছিল, তারা এই কাজ করে কী অর্জন করতে চেয়েছিল? এগুলি অবশ্যই,ভারতীয় পরিকল্পনাবিদদের মনে রাখার মত বিষয় হবে এবং আমরা নিশ্চিত করব যে, ভবিষ্যতে চীনাদের বিভিন্ন কার্যকলাপের প্রতি যাতে আরও সজাগ দৃষ্টি রাখা যায়।”

অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা সহজ হতে পারে। গত বছর সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত টিক-টকের মতো চীনা অ্যাপস নিষিদ্ধ করেছিল এবং চীনা বিনিয়োগে অনেক বাধার সৃষ্টি করেছিল। জাতীয়তাবাদী মনোভাবের মধ্যে চীনা পণ্য বর্জনের জন্য ক্রমবর্ধমান আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে কম দামের জিনিসপত্র থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন পর্যন্ত চীনা পণ্যগুলির ভারতীয় বাজারগুলিতে আমদানী অব্যাহত রয়েছে। ওষুধ ও সৌরবিদ্যুতের মতো অনেক ভারতীয় শিল্প চীনা উপাদানগুলির উপর নির্ভরশীল থাকে। গত বছর চীনে ভারতের রফতানিও অনেক বেড়ে গিয়েছে।

জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ধর বলেন, “ভারতীয় শিল্প এখন চীনকে একটি বাজার হিসাবে দেখছে এবং চীন ভারতকে তাদের বাজারে পণ্য বিক্রী করার প্রস্তাব দিয়েছে। সুতরাং, এখন দুদিক থেকেই চাপ আসতে শুরু করেছে। পূর্বে এই চাপটি কেবলমাত্র সেই খাত থেকেই আসছিল যে, সব শিল্প চীন থেকে আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল। এখন ইস্পাত এবং অন্যান্য অনেক শিল্পক্ষেত্র চীনের বাজারের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং সমগ্র ভারতের একটি বৃহৎ অংশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে।”

এর অর্থ হল এশিয়ার দুটি বৃহত্তম দেশের মধ্যে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলি কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন পথে চলতে পারে।

Your browser doesn’t support HTML5

অঞ্জনা পাসরিচার প্রতিবেদনটি পড়ে শোনাচ্ছেন জয়তী দাশগুপ্ত